কুচক্রী মহলের লোভে সুন্দরবন ধ্বংস হচ্ছে : বাপা
- ২৩ মে ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে গতকাল সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে, ‘বারবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন : কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বাপার সহ-সভাপতি মহিদুল হক খানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় কমিটির সদস্য ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী। বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সরেজমিনে পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম শেখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য রাখেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী ও বাপার কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের, বাপার যুগ্ম সম্পাদক, অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার প্রমুখ।
এতে উপস্থিত ছিলেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক ড. মাহবুব হোসেন, হুমায়ুন কবির সুমন, বাপার নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. হালিম দাদ খান, জাতীয় কমিটির সদস্য হাফিজুল ইসলাম, একরাম হোসেন, হাজী শেখ আনছার আলী, নাজিমুদ্দিন, শাকিল কবির, তিতলি নাজনিনসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বা উপকূলীয় বন নামেও পরিচিত।
দেশের কিছু ও কূচক্রী মহলের অতি লোভের কারণে সুন্দরবন বিভিন্নভাবে ধ্বংস হচ্ছে। আর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে বনজীবীদের ওপরে। সুন্দরবনে প্রাণিকুলের আবাস ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বনের প্রাণ-প্রকৃতির শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে বনের প্রাণিকুলের খাদ্যচক্রে।
সরেজমিন পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম শেখ। তিনি বলেন, সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনোভাবেই বন বিভাগ দায় এড়াতে পারে না। তিনি আরো বলেন, যাদের নিকট সুন্দরবন রক্ষায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের কাছে কি সুন্দরবন আদৌ নিরাপদ? সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানবসৃষ্ট এবং পরিকল্পিত। বার বার সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বড়গাছসহ লতাগুল্ম মারা যাচ্ছে। প্রাণিকুলের আবাসস্থল ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বনের শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে প্রাণিকুলের খাদ্যচক্রে। আঘাত আসে বাস্তুতন্ত্রে। সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে।
বিগত সময়ের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কারণ অনুসন্ধান করতে যেয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের সাথে আলাপকালে বন বিভাগের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সভাপতির বক্তব্যে মহিদুল হক খান বলেন, সুন্দরবন রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। তিনি সুন্দরবনকে রক্ষা করতে ঐকমত্যে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী প্রজন্মের বেঁচে থাকার স্বার্থে পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল করে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে।
জাকির হোসেন বলেন, পরিবেশ ও বন বিষয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা দেয়া হয়, কিন্তু তার পরেও বন-পরিবেশ ধ্বংস করা বন্ধ হচ্ছে না। বছরের কোন সময়টাতে আগুন লাগে প্রয়োজনে সেই সময় সুন্দরবনে বনজীবীদের প্রবেশ বন্ধ করে তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা করা উচিত।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের বলেন, সুন্দরবনে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানা করা যাবে না। অথচ সুন্দরবনের মতো অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গায় রামপাল তাপ বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে যা, সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ। সুন্দরবনে ঘন জঙ্গলের পরিমাণ মাত্র ১৩% অবশিষ্ট রয়েছে। তিনি স্থানীয়দের বন রক্ষায় সম্পৃক্ত করার দাবি জানান।
আলমগীর কবির বলেন, সরকারি নীরবতা থেকে প্রতীয়মাণ হচ্ছে যে, এসব গবেষণাপত্রের যৌক্তিকতা বিষয়ে তাদের কোনো দ্বিমত নেই। পরিবেশবাদীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে প্রকল্প গ্রহণের কুফল বিভিন্নভাবে সুন্দরবনের ওপর পড়ছে। সুতরাং এখনই সময় সুন্দরবনকে রক্ষার বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার।
অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, আমরা সুন্দরবন রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ। অনিয়ন্ত্রিত জলযান ও পর্যটকদের অবাদে বিচরণের ফলে সেখানকার জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে। তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনে গবেষকদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষণ করে বন ধ্বংসকারীদের অবাধে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
বাপার সংবাদ সম্মেলন থেকে সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ড বন্ধে ১৬টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হল : অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ও অগ্নিকাণ্ড বন্ধে বন বিভাগ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, নৌপুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, সংবাদকর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডে বিগত দিনের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ওয়াচটাওয়ার নির্মাণ করতে হবে। বনের মধ্যে অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে।
সুন্দরবন রক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সচেতন করতে হবে। ইআইএ ছাড়া সুন্দরবনের মধ্যে অপরিকল্পিত খাল খনন বন্ধ করতে হবে। বন বিভাগ কর্তৃক মৌয়ালদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় নীতিনির্ধারকদের গুরুত্ব দিতে হবে। ড্রোন ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরাসহ সুন্দরবন রক্ষায় বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সুন্দরবনের পরিধিতে, দ্রুত শিল্পায়ন বাড়ানো উচিত নয়।
উজানের পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে। সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর টেকসই সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। সিভিল সোসাইটি, পরিবেশবিদ, স্থানীয় বনজীবী ও সরকারের সমন্বয়য়ে জাতীয় নজরদারি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। বিজ্ঞপ্তি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা