ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরে স্থিতাবস্থা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির শেয়ার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের ওপর আগামী ৩০ মে পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। একই সাথে আপিল বিভাগ ইতালিয়ান-থাই কোম্পানিকে এ বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আগামী ৩০ মের মধ্যে লিভ টু আপিল দায়ের করতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমাদের কাছে দেশের স্বার্থই সব থেকে বড়। ব্যক্তি বা ব্যাংক নয়। আমরা হাইকোর্টের রায় দেখেই আদেশ দিব।
আদালতে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন, শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক, ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল। চায়না কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। এ বিষয়ে চীনা কোম্পানির আইনজীবী মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের স্থিতাবস্থার আদেশের কারণে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির শেয়ার চীনা কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। তিনি আরো বলেন, ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির শেয়ার চীনের সিনোহাইড্রো কোম্পানিতে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত তার মক্কেল ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে অর্থায়ন করবে না।

এ সময় পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলবে নাকি বন্ধ থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু ব্যাংক বলে দিয়েছে তারা অর্থ দেবে না, কাজেই এখন তো কাজ বন্ধ রয়েছে। ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আর্বিট্রেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্টেটাসকো (স্থিতাবস্থা) বহাল থাকে, তাহলে এই ঋণের শর্ত অনুসারে আরো যে ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা, সেটা ব্যাংক করবে না। এর ফলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মগবাজারের পরের কাজ অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়বে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে ডলারের যে অবস্থান তার মধ্যে এই ডলার আসলে দেশের জন্যই ভালো হতো। এ বিষয়ে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক জানান, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির শেয়ার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডকে হস্তান্তরে স্থিতাবস্থা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল পিটিশন করবেন তার মক্কেল। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, গত ১২ মে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির শেয়ার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার আদেশ তুলে নেন হাইকোর্ট। এর ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে থাইল্যান্ডের ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির শেয়ার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করতে বাধা কেটে যায়। বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্টের একক কোম্পানি বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ওই দিন আইনজীবী মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, আদেশে আদালত বলেছেন, দেনা-পাওনা নিয়ে থাই ও চায়না কোম্পানির বিরোধ সিঙ্গাপুরের আরবিট্রেশন আদালত নিষ্পত্তি করবেন। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে ইতালিয়ান থাই কোম্পানি। এর আগে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির শেয়ার চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ইতালিয়ান-থাই কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য এফডিইই কোম্পানি লিমিটেড নামে কোম্পানি গঠন করে ইতালি। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ৪৯ শতাংশ শেয়ার চিনের দু’টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়। দু’টি প্রতিষ্ঠান হলো- চীনের শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। তিন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার যথাক্রমে ৫১, ৩৪ ও ১৫ শতাংশ।