কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে খাল জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৫ মে ২০২৪, ০২:০১
ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা ছিল অনেক। জনবহুল এবং চ্যালেঞ্জিং এই শহরে নাগরিকদের চাওয়া গত চার বছরে প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ করতে না পারলেও ঢাকার দুই মেয়রের জলাবদ্ধতা নিরসন, খাল সংস্কার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নগরের বেশ কিছু সমস্যা সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ ছিল। আবার বাস রুট রেশনালাইজেশন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট, ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখাসহ ইশতেহারে প্রতিশ্রুত অনেক বিষয়েই কার্যকর পরিকল্পনা ও উদ্যোগ দেখা যায়নি। আবার খাল উদ্ধার ও বর্জ্য অপসারণ করা হলেও সেখানে নজরদারি ও ব্যবস্থাপনার অভাবে খালের প্রবাহ আবার মরে যাওয়া কিংবা উন্নয়নকৃত খেলার মাঠে জনগণের প্রবেশাধিকার সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার মতো উদাহরণও দেখা গেছে। পাশাপাশি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনেকেরই জনসম্পৃক্ততা ছিল না, অনেকের বিরুদ্ধে খাল ও জমি দখল এবং দুর্নীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে। সামনের দিনগুলোতে সিটি করপোরেশনকে আরো কার্যকর ও জনবান্ধব করতে ওয়ার্ড এবং এলাকাভিত্তিক চাহিদা নিরূপণ করে অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনা তৈরি এবং ওয়ার্ড মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন সম্পন্ন করে দ্রুত বাস্তবায়ননের মাধ্যমে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও সেবার মান বাড়াতে হবে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে। গতকাল ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) আয়োজিত ‘ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদের চার বছর : নাগরিকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আইপিডি নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে নগর পরিকল্পনাবিদরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন। মূল প্রবন্ধে আইপিডির পক্ষ থেকে পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার দুই মেয়রের ইশতেহারে প্রতিশ্রুত অনেক বিষয়ই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছিল না। এগুলো ভোটারদের আকৃষ্ট করতেই বলেছিলেন তারা। আবার আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের কর্মপরিধিও ব্যাপক। গত চার বছরে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম খাল উদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন যার মধ্যে মোহাম্মদপুরের লাউতলা ও রামচন্দ্রপুর খাল, মিরপুরের প্যারিস খাল এবং সাঁতারকুলের সুতিভোলা খাল থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ ও আবর্জনা অপসারণ উল্লেখযোগ্য। ঢাকা উত্তরের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন, নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, হকার ব্যবস্থাপনায় পাইলট প্রজেক্ট, নি¤œ আয়ের বসত এলাকায় সবুজায়ন ও অগ্নি ঝুঁকি কমাতে ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফ্লাইওভারের পিলারে দৃষ্টিনন্দন স্ট্রিট আর্ট, ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা, নাগরিক সেবা সংশ্লিষ্ট সবার ঢাকা অ্যাপ প্রভৃতি।
আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধার করার উদ্যোগটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ। এছাড়া ডিএসসিসির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজগুলো হলো- শ্যামপুর, মান্ডা, জিরানী ও কালুনগর খাল উদ্ধারের প্রকল্প, পর্যটন ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে ঐতিহ্য বলয় বাস্তবায়ন এবং ঢাকা ফটক ও লালকুঠির পুনঃসংস্কার কাজ, ইন্টিগ্রেটেড মাস্টারপ্ল্যান ফর ঢাকা সিটির মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও করপোরেশনের দুর্নীতি দূরীকরণের উদ্যোগ; নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমতা বৃদ্ধি, রিকশাসহ অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ এবং ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদান।
ডিএনসিসির প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা নেই, স্কুল বাস চালুর ঘোষণা সত্ত্বেও অগ্রগতি নেই, নতুন ওয়ার্ডগুলোর পরিকল্পনা প্রণয়ন হলেও অর্থায়নের অভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি কম, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন উদ্যোগে পরিবেশগত প্রভাবের শঙ্কা, খাল উদ্ধার ও বর্জ্য পরিষ্কার উদ্যোগগুলো টেকসই হচ্ছে না ও কমিউনিটির সম্পৃক্ততার অভাব রয়েছে। পক্ষান্তরে ঢাকা দক্ষিণের ক্ষেত্রে এই সঙ্কটগুলো হচ্ছে- খেলার মাঠগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন গোষ্ঠী ও ক্লাবের দখলে, পার্ক ইজারা দেয়ার কারণে বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়ছে, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নপ্রক্রিয়ায় এলাকাবাসীর মতামত, সম্পৃক্ততা ও অংশগ্রহণের সুযোগ কম, উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে ওসমানী উদ্যান-শিশুপার্ক দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগের অভাব, ফলে বিশাল সংখ্যক মানুষ অগ্নিঝুঁকিতে, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেই।
আইপিডি বলছে, ঢাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের জনসম্পৃক্ততা দিন দিন কমছে। এলাকার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উদ্যোগ এ কাউন্সিলরদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিল অফিসের সক্ষমতার অভাব। ঠিকাদারি ও ব্যবসায় আগ্রহ এবং এতে কাউন্সিলরদের আত্মীয়-পরিজনদের সম্পৃক্ততার অভিযোগের পাশাপাশি এলাকাবাসীর কাছে জবাবদিহিতার অভাব আছে। খাল, জমি দখলের অভিযোগের পাশাপাশি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে অনেক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। এসব সমস্যা দূর না করতে পারলে ওয়ার্ড কাউন্সিল থেকে কার্যকর নাগরিক সেবা ও নগর উন্নয়ন সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন, আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, পরিকল্পনাবিদ রাকিবুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা, পরিকল্পনাবিদ দ্বীপ দাস, ইয়াসির আমিন, শর্মিলা ইসলাম, মনিম আব্দুল্লাহ, ফাইজুর রহমান, জিহাদ আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা