১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের কাজ শেষ হবে জুনে

দৃষ্টিনন্দন দোহাজারী রেলস্টেশন : নয়া দিগন্ত -

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত বহুল প্রত্যাশিত কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে। বিষয়টি গতকাল বিকেলে নিশ্চিত করেছেন ওই প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তগীন।
তিনি জানান, এখন শুধু অত্যাধুনিক সিগন্যালিং ও ১১টি রেলগেট নির্মাণকাজ বাকি আছে। সেই কাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলছে। লট-১-এর ১১ রেলগেট এবং লট-২-এর ছয়টি রেলগেট ও সিগন্যালিং কাজসহ ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ ৯৮ ভাগের বেশি শেষ হয়েছে।
অপর দিকে দুই দেশের যৌথ অর্থায়নে বহুল প্রত্যাশিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সাথে সঙ্গতি রেখে দোহাজারী ষোলশহর চট্টগ্রাম পাহাড়তলী পর্যন্ত মিটারগেজ (এমজি) রেল ট্র্যাককে ব্রডগেজে (বিজি) উন্নীত করার কাজ শুরু হবে চলতি বছরই। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকারও বেশি। ওই প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন রয়েছে তিন হাজার ৭১১ কোটি টাকার উপরে আর প্রকল্প সহায়তা বা ঋণ রয়েছে সাত হাজার ৮৬ কোটি টাকা। গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই প্রকল্পের পিডি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের মূল কাজ (রেল ট্র্যাক) সম্পন্ন হওয়ার পর গত বছরের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন রেলপথে ট্রেন সার্ভিস চলাচলের শুভ উদ্বোধন করেন।
জানা গেছে, যৌথ অর্থায়নে দোহাজারী-কক্সবাজার ভায়া ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাক। বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির যৌথ অর্থায়নে এ কাজ বাস্তবায়ন হবে।
প্রস্তাবিত ১২৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রথম অংশে সিঙ্গেল ট্র্যাক ডাবলগেজ (একই সাথে মিটারগেজ বা এমজি ও ব্রডগেজ বা বিজি ) দীর্ঘ রেলপথটি নির্মিত হয়েছে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে। প্রথম ভাগে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার (দুই লটে) রেলপথ বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়েছে। এর পরেই শুরু হবে কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত অবশিষ্ট ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ।
জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমানার ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে আসছে চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে প্রথম ধাপে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় দুই ভাগে। প্রথম ভাগে বা লটে দোহাজারী-রামু রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আর দ্বিতীয় ভাগের বা লটে রামু-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু হয় একই বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে।
অপর দিকে যেহেতু দোহাজারী থেকে নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত দীর্ঘ রেল ট্র্যাকটি মিটার গেজে নির্মিত। সঙ্গত কারণেই এই মিটার গেজ ট্র্যাকটিকে ডুয়েল গেজে (ব্রড গেজ ও মিটার গেজ) উন্নীতকরণ কাজ শুরু করা হচ্ছে চলতি বছরের মধ্যেই। আর এই প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন হচ্ছে দুই দেশের যৌথ অর্থায়নে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকার উপরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত বছর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)-এর সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই প্রকল্পের পিডি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে নিরাপদ ও দ্রুতগতি সম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ স্থাপনকল্পে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে দোহাজারী পর্যন্ত বিদ্যমান মিটারগেজ রেলপথটি ব্রডগেজ লাইনে উন্নীতকরণের মাধ্যমে ট্রেনের গতিসীমা বৃদ্ধি এবং সেকশনাল ক্যাপাসিটি দৈনিক ২৬ জোড়া ট্রেনে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে ঝাউতলা রেলস্টেশন পর্যন্ত ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ বাইপাস ট্র্যাক নির্মাণ, চট্টগ্রামের ষোলশহর স্টেশন থেকে কালুরঘাট ব্রিজের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাক নির্মাণ, গুমদন্ডী থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ এবং ওই সেকশনের তিনটি রেলস্টেশনকে নতুন করে পুনঃনির্মাণ ও ১৪টি রেলস্টেশন সংস্কারকরণ করা হবে ওই প্রকল্পে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার নিরবচ্ছিন্নভাবে দ্রুতগতি সম্পন্ন ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে এবং এ অংশের সেকশনাল ক্যাপাসিটি (দৈনিক ২৬ জোড়া ট্রেন) বাড়বে পর্যায়ক্রমে। এ ছাড়া পাহাড়তলী-ঝাউতলায় বাইপাস নির্মাণ করা হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী ট্রেনগুলোকে আর চট্টগ্রামে ঢুকে অতিরিক্ত সময় অপচয় করতে হবে না, এতে এক ঘণ্টা রানিং টাইমও সাশ্রয় সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম-ষোলশহর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উচ্চগতির ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়াও ঢাকা ও সিলেট এলাকা থেকে উচ্চগতির ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামের গুমদন্ডী-দোহাজারী মেইনলাইন রেলপথ ২৯.৩২ কিমি, পাহাড়তলী-ঝাউতলা বাইপাস রেলপথ ডুয়েলগেজ ডবল ট্র্যাক (২-২.৭৫ = ৫.৫০ কিমি ), লুপ ও অন্যান্য লাইন ১০.৮৮ কিমি-সহ মোট৬২.৮৮ কিমি ট্র্যাককে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর ও নতুন নির্মাণ করা হবে; চট্টগ্রাম-ষোলশহর থেকে কালুরঘাট ব্রিজের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডবল ট্র্যাক নির্মাণ (২- ৮.৫৯ = ১৭.১৮ কিমি), পাঁচটি স্টেশন (পাহাড়তলী, ষোলশহর, পটিয়া, কাঞ্চননগর এবং দোহাজারী) কম্পিউটার বেইজ্ড ইন্টারলকিং (সিবিআই) সিগন্যাল ও ইন্টারলকিং পদ্ধতি চালু করা; তিনটি স্টেশন ভবন (পাহাড়তলী, ষোলশহর ও ঝাউতলা) পুননির্মাণ এবং ১৪টি স্টেশন ভবন-এর সংস্কারকাজ রয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে ২০টি মেজর এবং ৬৮টি মাইনর ব্রিজ পুনঃনির্মাণ রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পে তিনটি রেল ওভারপাস নির্মাণ নির্মাণ করা হচ্ছে। তা ছাড়া ওই প্রকল্পের মধ্যে ৩০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকোমোটিভও সংগ্রহ হবে বলে অনুমোদিত প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement