নানার কবরে শায়িত পাইলট আসিম জাওয়াদ

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত পাইলট আসিম জাওয়াদকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের সেওতা কবরস্থানে নানা মরহুম মোহাম্মদ রউফ খানের কবরেই তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে বেলা পৌনে ১২টার দিকে নিহত পাইলট আসিম জাওয়াদের লাশ বহনকারী বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার মানিকগঞ্জের শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। এর কিছুক্ষণ পর হেলিকপ্টার থেকে তার কফিনবন্দী লাশ কাঁধে করে নামিয়ে আনেন বিমানবাহিনীর সদস্যরা। পরে নিহত আসিমকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ সময় ছেলের কফিনবন্দী লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নিলুফা খানমসহ স্বজনরা।
পরে বেলা ২টার দিকে শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামে বাদ জুমা পাইলট আসিম জাওয়াদের তৃতীয় নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। এর পর লাশবাহী গাড়িতে করে লাশ সেওতা কবরস্থানে নেয়া হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে নানা মরহুম মোহাম্মদ রউফ খানের কবরে দাফন করা হয় এই পাইলটকে।
এদিকে পাইলট আসিম জাওয়াদের লাশ শেষবারের মতো এক নজর দেখতে সকাল থেকেই স্টেডিয়ামে ভিড় করতে থাকেন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষসহ স্বজনরা। আসিমের লাশ বহনকারী বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার করে তার বাবা আমানউল্লাহ, স্ত্রী অন্তরা আক্তার ও দুই সন্তানসহ স্বজনরা সেখানে নামেন। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহত আসিম জাওয়াদের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুরে। তিনি ওই গ্রামের ডা: মোহাম্মদ আমানউল্লার ছেলে। তার মায়ের নাম নিলুফা খানম। আসিম স্ত্রী, ছয় বছর বয়সী কন্যা আইজা ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের ২০ মার্চ আসিম জাওয়াদ জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০০৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগ দেন এবং ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন।

চাকরিকালীন আসিম জাওয়াদ দেশ-বিদেশে পেশাগত বিভিন্ন কোর্সে অংশ নিয়ে সফলতার সাথে তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া তিনি চীন থেকে ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স ও কোয়ালিফায়েড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি পেশাদারি দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমানবাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমানবাহিনী প্রধানের প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এ ছাড়া ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কোর্সে অংশ নিয়ে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্ডিয়ান এয়ার অর্জন করেন।
ফিউনারেল প্যারেড অনুষ্ঠিত
স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ আসিম জাওয়াদের ফিউনারেল প্যারেড এবং দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শুক্রবার ঢাকা সেনানিবাসস্থ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশারের প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান (পরিচালন) এয়ার ভাইস মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এবং নৌবাহিনী প্রধানের পক্ষ থেকে ঢাকা নৌ অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মাসুদ ইকবাল মরহুমের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়াও, অনুষ্ঠানে আসিম জাওয়াদের পরিবারের সদস্য, সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদবীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।