১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

খরতাপেই চলছে চট্টগ্রামে বোরো কাটার উৎসব

চাল উৎপাদন ২২৩ লাখ টন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা
চট্টগ্রামে পাকা বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। গতকাল বাঁশখালী উপজেলা থেকে তোলা ছবি : এসএম রহমান -

বৈশাখের প্রচণ্ড খরতাপের মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সমগ্র জেলাজুড়ে চলছে পাকা বোরো ধান কাটার উৎসব। ইতোমধ্যে জেলায় প্রায় ১৫ ভাগ পাকা ধান সংগ্রহ করেছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামের মতো সারা দেশে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪) চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুই লাখ ৮৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিসহ সারা দেশে এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ হেক্টর। আর চালে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল দুই কোটি ২২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৬ টন। দেশে এবার ৫০ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ ছাড়িয়েছে। এ কারণে চালের উৎপাদন এবার ২২৩ লাখ টন ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ তাজুল ইসলাম পাটওয়ারী।
তিনি জানান, এবার মৌসুমের শুরুতে প্রাকৃতিক বৈরিতা দেখা গেলেও সরকারিভাবে দেশব্যাপী ২৯ লাখ ৪০ হাজার জন কৃষক ১৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার সর্বোচ্চ কৃষি প্রণোদনা পেয়েছেন, এ ছাড়া উপজেলা পর্যায়ে বোরো আবাদ নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সরাসরি মনিটরিং করার কারণেই এবার বোরো ধানের আবাদি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। কৃষি প্রণোদনার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার (হাইব্রিড ও উফশী) ৭২ হাজার কৃষকসহ সারা দেশে ২৯ লাখ ৪০ হাজার কৃষক সার বীজ ও অন্যান্য উপকরণসহ ১৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার কৃষি প্রণোদনা পেয়েছেন।
কৃষি প্রণোদনার মধ্যে উফশী জাতের বোরো আবাদের জন্য মোট ১৫ লাখ কৃষকের মধ্যে ১০৭ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদের জন্য ১৪ লাখ ৪০ হাজার কৃষকের মধ্যে ৮৯ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকার কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়।
সরকারিভাবে মাঠপর্যায়ের কৃষকরা কৃষি প্রণোদোনাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কারণে এবারো বোরো ধান চাষের পরিধি প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত অর্জিত হয়েছে। এতে এবার চালে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার জমির মধ্যে হাইব্রিড ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৯০ হেক্টর, উচ্চফলনশীল বা উফশী ৩৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬০০ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ছিল ১৫ হাজার ৯০০ হেক্টর।

গতকাল বিকেলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপর দিকে গত মৌসুমে (২০২২-২৩) চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৫ জেলার দুই লাখ ৮৩ হাজার ৭৬৪ হেক্টরসহ সমগ্র দেশে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছিল ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৭২ হেক্টর জমি। এতে চাল উৎপাদন হয়েছিল দুই কোটি ১৮ লাখ ৫১ হাজার ৮৫৪ টন। এবার বোরো ধান চাষের পরিধি ১৮ হাজার হেক্টর বৃদ্ধি পাওয়ায় চাল উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
চলতি মৌসুমে (২০২৩-২৪) দেশজুড়ে ১৪টি কৃষি অঞ্চলের মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চট্টগ্রাম লক্ষ্মীপুর ফেনী কক্সবাজার ও নোয়াখালীসহ ৫ জেলায় দুই লাখ ৮৬ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৬১ টন। ইতোমধ্যে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জিত হয়েছে দুই লাখ ৯১ হাজার ৫৩ হেক্টরে। এ অঞ্চলের চট্টগ্রাম জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জিত হয়েছে ৬৮ হাজার ৭৯৯ হেক্টর। এর মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৮৫০ হেক্টর।
সুষ্ঠু কৃষি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে তদারকির কারণে ৩০০ হেক্টর বেশি হয়ে অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ১৫০ হেক্টর গতকাল বিকেলে বোরো আবাদ ৩০০ হেক্টর বেশি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাঁশখালী কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু সালেক। বাঁশখালী উপজেলা ও পটিয়া উপজেলাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্বত্র পাকা বোরো ধান কর্তন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৪০ ভাগ পাকা বোরোধান কাটা শেষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো: নাছির উদ্দিন।


আরো সংবাদ



premium cement