ইটের বিকল্প পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লক আনছে ম্যাক্স গ্রুপ
- হামিদ সরকার মানিকগঞ্জের জাগী থেকে ফিরে
- ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৫
- মাটির ইট তৈরিতে বছরে ২৮৪ কোটি সিএফটি উর্বর মাটি নষ্ট হয়
- দেড়শ' কোটি টাকা বিনিয়োগের শিল্পটি শিগগিরই পূর্ণ উৎপাদনে যাচ্ছে
বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৮৪ কোটি সিএফটি উর্বর মাটি নষ্ট হয় শুধু মাটির ইট তৈরি করতে এবং এর ফলে এক কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার টন কার্বনডাই অক্সাইড নির্গমন ঘটে বলে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন। তাই বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রীর প্রসার বাড়াতে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় অটোক্রেভড এয়ারটেড এরেটেড কংক্রিট ব্লক কারখানা নির্মাণে ১৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে ম্যাক্স গ্রুম্প। মূলত সিমেন্ট, চুন, জিপসাম, অ্যালুমিনিয়াম পাউডার, বালি ইত্যাদি কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হয় এএসি ব্লক। এটি হালকা ও মজবুত হওয়ায় যেকোনো নির্মাণকাজে ব্যবহার উপযোগী। তিন লাখ ৬৫ হাজার ঘনমিটার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতাসহ, প্ল্যান্টটি ঈদুল আজহার পরে পূর্ণ উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
লাল ইটের বিকল্প হিসেবে এই কংক্রিট ব্লক ব্যবহার হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কংক্রিট ব্লক ব্যবহার করলে ভবনের নির্মাণখরচ ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
গত ১৮ এপ্রিল মানিকগঞ্জের জাগীতে পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন কারখানার উদ্বোধন করা হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এটি উদ্বোধন করেন। এ সময় এই শিল্প সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। ম্যাক্স গ্রুপ জানায়, উপকরণ ও ব্যয়সাশ্রয়ী নির্মাণ উপকরণ নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে পোড়ামাটির ইট শুধু কার্বন নিঃসরণই করে না, খাদ্য উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। কংক্রিট ব্লক ব্যবহার করলে ভবনের নির্মাণখরচ ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। ম্যাক্সক্রিট লিমিটেড নামের নতুন কারখানাটি মানিকগঞ্জের জাগীরে নির্মিত হচ্ছে। তিন লাখ ৬৫ হাজার ঘনমিটার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতাসহ, প্ল্যান্টটি ঈদুল আজহার পরে পূর্ণ উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে জানা গেছে, পরিবেশ ও মাটির উর্বরতা রক্ষার্থে ২০২৫ সালের মধ্যে ইটভাটা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়াও পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার কমাতে নির্মাণস্থলে বিকল্প ইট এবং ব্লক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। পরিবেশ রক্ষা করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবেলা করতে বাংলাদেশে এএসি ব্লক এবং প্যানেল প্রবর্তনের এই উদ্যোগ নিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ম্যাক্স গ্রুপ। কংক্রিট ব্লক ও ইটের মূল কাঁচামাল হচ্ছে- বালি, জিপসাম, সিমেন্ট, চুন, অ্যালুমিনিয়াম পেস্ট এবং পানি। ম্যাক্সক্রিট উন্নত মানের সাথে টেকসইয়ের বিষয়টিও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এমনিতেই দেশে আবাদি জমির পরিমাণ অপ্রতুল। ইটভাটার জন্য এই জমি আরো সন্তুচিত হচ্ছে। ইটভাটা সংলগ্ন জমিও হারাচ্ছে তার উর্বরতা। দ্বিতীয়ত, ইট পোড়ানোর ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বৃক্ষসম্পদ। গাছ কাটা হচ্ছে ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য। তৃতীয়ত, ইটের ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া দূষিত করছে বাতাস এবং হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এটি কয়লা বা অন্যান্য জ্বালানিতে পোড়ানো হয় না। তাছাড়া, এএসি ব্লক উৎপাদনে কোনো বিষাক্ত গ্যাস বা অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ নেই। এসব কিছু বিবেচনায় বিশ্বমানের দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারে পরিবেশবান্ধব বাড়ি নির্মাণে কাজ করতে যাচ্ছে ম্যাক্সক্রিট।
উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, এএসি ব্লকের ওজন তুলনামূলক কম। এর কারণে নির্মাণকাজ সহজ করে তোলে। এছাড়াও রক ইট শব্দ, অগ্নি ও তাপ নিরোধক। ইলেকট্রিক্যাল পাইপ বসানোর জন্য দেয়াল কাটা লাগে না। ইটের মতো অধিক পানি শোষণ করে না। এই ব্লক গাঁথুনির কাজে ব্যবহারের আগে ইটের মতো পানিতে ভেজাতে হয় না। কংক্রিটের রকে নোনা ধরে না, ঘামে না, ডাম্প হয় না, ফাঙ্গাস পড়ে না বলে এটি দীর্ঘস্থায়ী। কংক্রিটের ব্লকে ইটের তুলনায় কম পুরুত্বের প্লাস্টারিং ব্যবহার করা হয়। বাড়ির ব্যক্তিগত ওজন ও নির্মাণখরচ দুই-ই কমাবে এতে। পরিবেশবান্ধব এবং ভূমিকম্প সহনশীল। ব্লক ইট কৃষি জমি ও বনজ সম্পদের অপচয় রোধ করে। এতে কোনো জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে না। প্রকৃতির ওপর ভরসা না করে বছরব্যাপী উৎপাদন করা সম্ভব। শব্দশোষণ ক্ষমতা বেশি অগ্নি, তাপ নিরোধকে অধিক কার্যক্ষম। স্থায়িত্বকাল ও কাঠামোগত ভারসাম্য বেশ ভালো। ম্যাক্সক্রিট ব্লকের সুবিধা তুলে ধরে তারা জানান, কম ওজন। কংক্রিট ব্লক বা ইটের তুলনায় এএসি ব্লকগুলো বেশ হালকা। এর কারণে এটি পরিবহন এবং ইন্সটল করা সহজ করে তোলে। শ্রম, খরচ এবং নির্মাণের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনে।
যদিও এএসি ব্লকের প্রাথমিক খরচ ইটের তুলনায় সামান্য বেশি হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার ক্ষেত্রে এটি অনেক গুণ এগিয়ে। নির্মাণের সময় বাঁচানো, ইট ও প্লাস্টারে মটার সঞ্চয়, কম শ্রম খরচ এবং ন্যূনতম রক্ষণাবেক্ষণসহ বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। এটি একটি বিল্ডিংয়ের ২০ শতাংশ কাঠামোগত খরচ হ্রাস করে। তাপ নিরোধক উল্লেখ করে ম্যাক্সক্রিট ব্লক উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এএসি রকের অন্যতম গুণ হলো তার ব্যতিক্রমী তাপ নিরোধক বৈশিষ্ট্য। এই রকগুলো ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে বেশ ভূমিকা রাখে। তাপ নিরোধক হওয়ায় গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে আরামদায়ক ও বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এএসি ব্লক শব্দ নিরোধক গুণাগুণসম্পন্ন। শব্দরোধ করার ক্ষেত্রেও চমৎকার কাজ করে। ফলে বাইরের অতিরিক্ত শব্দ ঘরে প্রবেশ করে না। এছাড়া এএসি ব্লক তার খনিজ গঠনের কারণে সহজাতভাবে আগুন-প্রতিরোধী। কাঠামোগত দিক থেকে শক্তিশালী হওয়ায় এগুলো ৫-৬ ঘণ্টার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।
পরিবেশবান্ধব এই পণ্য বাংলাদেশে গতানুগতিক তৈরি ইটের বহুল ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ইট তৈরিতে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি বহুল ব্যবহৃত হয় এবং প্রচুর পরিমাণ জ্বালানি প্রয়োজন হয় যা দেশের বনজসম্পদ এবং কৃষিজমি হাসের অন্যতম কারণ। এগুলো বালু, সিমেন্ট, অ্যালুমিনিয়াম পেস্ট এবং পানিসহ প্রাকৃতিক উপকরণ থেকে তৈরি। এএসি ব্লক নকশা ও পছন্দ অনুসারে সহজেই কাস্টমাইজড করা যেতে পারে। ফলে যেকোনো ডিজাইন তৈরি করার জন্য এগুলোকে কাটা এবং আকার দেয়া যেতে পারে। এএসি ব্লক কম ওজন হওয়ায় এটি দিয়ে ইটের গাঁথুনি দিতেও কম সময় লাগে। এই রক গাঁথুনির কাজে ব্যবহারের আগে ইটের মতো পানিতে ভেজাতে হয় না। ফলে খুব দ্রত সময়েই কাজ শেষ করতে পারেন শ্রমিকরা। এতে সময় এবং খরচ উভয়ই বাঁচে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা