দেশে হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা সঙ্কট
জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে ধর্ম মন্ত্রণালয় : হাব সভাপতি- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:২০
চলতি বছরে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ হতে পারে ১৬ জুন। আর মাত্র দুই মাস বাকি। অথচ এখনো হাজীদের বাড়ি ভাড়াসহ অনেক আনুষ্ঠানিকতাই বাকি। এ কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নেতারা। সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে। যদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে হজযাত্রীরা কষ্ট পায় তা হলে তিনি রেহাই পাবেন না, আমরাও রেহাই পাবো না। গত মঙ্গলবার রাতে ‘হজ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা করে হাব। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত সভায় সারা দেশের হজ এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজ ব্যবস্থাপনায় অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি ছিল। আমরা অন্যায় করবো না, করতে দেবো না এই সে্লাগানে কাজ করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাব অবস্থান নেয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা স্থায়ী না, তারা দুই-তিন বছর পরপর বদলি হন, হজের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে তাদের স্বচ্ছ ধারণা নেই। তাদের কারণে হজ ব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমরা চাই না। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এজেন্সি মালিকদের সাথে পরামর্শ করেন না বলেও অভিযোগ হাবের। এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজ ব্যবস্থাপনা আবার চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। আমরা আগেই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম, হজ ব্যবস্থাপনা এ বছর চ্যালেঞ্জিং হবে। এজেন্সি কোটা সর্বনিম্ন ১০০ জন রাখতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীর সংখ্যা কমাতে অনাগ্রহী হয়। সর্বোচ্চ এজেন্সি কোটা ৩০০ থাকা সত্ত্বেও কী কারণে ৫০০ জন করা হলো তা বোধগম্য নয়। ধর্মমন্ত্রী এজেন্সি প্রতি ৪০০ জন কোটা রাখার নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও ধর্মসচিব ৫০০ জন কোটা নির্ধারণ করলেন। কেন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। হাব সভাপতি বলেন, সৌদি সরকার ৫৬ এজেন্সির মাধ্যমে হজ কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিলেও আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ এজেন্সিতে হজযাত্রীর সংখ্যা বেশি হলে সব যাত্রীকে সেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃদ্ধ হাজীদের জন্য সঠিকভাবে সেবা প্রাপ্তিতে বিঘœ ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের ভূমিকা যথার্থ ছিল না।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কারণে এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের সৌদিতে যেতে হয়। প্রতি বছর প্রতিনিধিদের সৌদি যেতে মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেয়া হয়ে থাকে। পরিচালক হজ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিজিট ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনো হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। তারা সৌদি আরবে না গেলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজেন্সির প্রতিনিধি ছাড়া বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং বাড়ি ভাড়া করা না গেলে হজ ভিসা করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশন আছে। জেদ্দা কনসাল জেনারেল (হজ) আছেন, তারা চাইলেই সৌদি আরবে সরকারি নিবন্ধিত হাজীদের বাড়ি ভাড়া করতে পারেন। তার পরও ধর্ম সচিবের নেতৃত্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে লোকবলের বিশাল বহর নিয়ে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে অবস্থান করে মাত্র চার হাজার জনের জন্য সরকারিভাবে বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়া বেশির ভাগ হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়ার জন্য সৌদি যেতে মোনাজ্জেম ভিসার ব্যবস্থা করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সি প্রতিনিধিরা সৌদি যেতে না পারলে বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া কীভাবে সম্ভব? ধর্ম মন্ত্রণালয় মোনাজ্জেমদের ওমরা ভিসায় যেতে বলছে, কিন্তু এখন ওমরা ভিসাও বন্ধ হয়ে গেছে। যারা এখন সেখানে আছেন তাদেরও ফিরে আসতে হচ্ছে। হজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য মোনাজ্জেমদের তিন থেকে ছয় মাসের মাল্টিপল ভিসা দেয়া প্রয়োজন।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, হজযাত্রীদের মিনায় অবস্থানের লোকেশন এবং সার্ভিস প্রোভাইডার এখনো নির্ধারণ হয়নি। তিন সপ্তাহ পর ফ্লাইট, অথচ ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল আজ পর্যন্ত প্রকাশ না হওয়ার কারণে এজেন্সি বাড়ি ভাড়া বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তিনি বলেন, প্রতি বছর দেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সৌদি নেয়া হয় হজে সহায়তাকারী হিসেবে। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এ প্রেক্ষাপটে সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো সহায়তাকারী নেয়া হবে না। সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের দায়িত্ব দেয়া হবে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বাংলাদেশ থেকে হজ সহায়তাকারী নিচ্ছে।
হাব সভাপতি বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা কখনো বেসরকারি হজ যাত্রীদের খোঁজ-খবরও নেন না। মিনা, মুজদালিফায় তারা কোনো দায়িত্ব পালন করে না। সরকারি চার-পাঁচ হাজার হাজীর সেবার জন্য মাত্র ৪০ জন প্রয়োজন। এ জন্য সহায়তার নামে প্রশাসনিক টিমের বিশাল সংখ্যক জনবল দেশ থেকে নেয়া দেশের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সব চেয়ে বেশি হাজী যায় হজ এজেন্সির মাধ্যমে, তাদের জন্য সহায়তাকারী বেশি প্রয়োজন। তাই সহায়তাকারী হিসেবে হজ এজেন্সিকে ভিসা সুবিধা নিতে হবে।
তসলিম বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ২৮ হাজার হজযাত্রী রিফাত কোম্পানিতে তালিকাভুক্ত। তাদের মুজদালিফা অনিশ্চিত। এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে হজ ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে। হজ খুব কাছেই। কিন্তু মূল কাজের এখনো কিছুই হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয় মনে হচ্ছে জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে। এভাবে তাদের অবহেলার কারণে এত দিনের অর্জিত শৃঙ্খলা আবারো কালিমাময় দিনগুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক। হাব সভাপতি বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে হাব এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বলবো আপনারা ঘুম থেকে জেগে উঠুন। আগামী হজের চ্যালেঞ্জ বুঝতে না পারলে খুবই সমস্যায় পড়তে হবে। কপালে দুঃখ আছে।
হজ এজেন্সি মালিক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এ জন্য একটি স্থায়ী কমিটি থাকা দরকার। তিনি বলেন, হাবকে পাশ কাটিয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সুন্দর হবে না, এটা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বুঝতে হবে।
সভায় আরো ছিলেন, হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান ও শাহ আলম, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, অর্থসচিব মুফতি আব্দুল কাদের মোল্লা, জনসংযোগ সচিব মুফতি মুহাম্মদ জুনায়েদ গুলজার প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা