৩২ বছর পর চুরির দায় থেকে অব্যাহতি

১৯৯২ সালে ১৮ হাজার ৭৫০ টাকার মতো চুরির অভিযোগে মামলা হয়। বিচার শেষে সেই মামলায় নি¤œ আদালতে সাজাও হয়। তবে হাইকোর্টে আবেদন করে আসামিরা খালাস পেয়েছেন। আর চুরির এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেতে নরসিংদীর আবদুর রাজ্জাকসহ অন্য আসামিদের লেগেছে ৩২ বছর।
২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্জাকসহ অন্য আসামিদের খালাস দিয়ে রায়টি দিয়েছেন বিচারপতি মো: আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। সম্প্রতি এই রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে হাইকোর্ট বিচারিক আদালত ও আপিল আদালতের রায় বাতিল করে করেন। আসামিদের টাকা চুরির দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে খালাস দেন।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, এক নং সাক্ষী হচ্ছেন এই মামলার বাদি। এজাহারের সাথে তার সাক্ষ্যে যথেষ্ট গরমিল রয়েছে। জবানবন্দিতে বলেছেন, চোরাই টাকার মধ্যে ১৮ হাজার টাকা কিরণ নেছার বাড়ী থেকে উদ্ধার হয়েছেন মর্মে শুনেছেন। একবার বলেছেন ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা টাকার পরিমাণ ১৭ হাজার ৭৫০ টাকা আবার উল্লেখ করেছেন ১৭ হাজার ৬৬৫ টাকা। ২ নম্বর ও ৩ নম্বর সাক্ষী চুরির কথা শুনেছেন। চার নম্বর সাক্ষী টাকা উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন না। ৫ নম্বর সাক্ষীও টাকা চুরির কথা শুনেছেন। ৬ নম্বর সাক্ষী কিরণ নেছার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করার কথা শুনেছেন। ৭ নম্বর সাক্ষী টাকা চুরির কথা শুনেছেন। ৮ নম্বর সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তা।
তিনি জেরায় বলেন কোনো জায়গা থেকে চোরাইকৃত টাকা উদ্ধার করা হয়েছে জব্দ তালিকায় তার উল্লেখ নেই। উদ্ধারকৃত টাকার বিশেষ নম্বর ও চিহ্ন নেই। সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। বাদি আবেদনকারীদের হয়রানি করার হীনমানষে এই মিথ্যা মামলাটি করেছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো: আশেক মোমিন, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট লাকী বেগম ও ফেরদৌসী আক্তার। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯২ সালের ৩০ জুলাই সোনালী ব্যাংক থেকে ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা তুলে ঘরের ট্রাংকে রাখেন জব্বার মিয়া। পাশের কক্ষে বসবাসকারী ইব্রাহিম সেই টাকা রাখতে দেখেন। ৫ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ঘরে আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ট্রাংকটি নেই। ঘরের বাইরে এসে দেখেন ইব্রাহিম ও কবির ট্রাংক ফেলে দৌড়ে পালাচ্ছে। ট্রাংকের আংটা ভাঙা এবং ভেতরে টাকা নেই। এ ঘটনায় ওই বছর ৭ আগস্ট নরসিংদী থানায় মামলা হয়। তদন্ত শেষে ৭ সেপ্টেম্বর আসামি ইব্রাহিম, কবির, আব্দুর রাজ্জাক ও তার মা কিরন নেছার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এ মামলার বিচার শেষে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ১৯৯৩ সালের ১৫ মে আসামিদের কারাদণ্ড দেন। রায়ে কবির, রাজ্জাক ও ইব্রাহিমকে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং কিরণ নেছাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন। আলামত হিসেবে জব্দ টাকা বাদিকে ফেরত দিতে বলা হয়।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে আপিলের পর নরসিংদীর দায়রা জজ আদালত ১৯৯৫ সালের ২৫ মার্চ আপিল নামঞ্জুর করেন। এরপর আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করেন। শুনানি শেষে ২০২৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।