২৫ দিন শেকলে বেঁধে রেখে তরুণীকে ধর্ষণ গ্রেফতার ৪ জন ৩ দিনের রিমান্ডে
এক ব্যারিস্টারের নির্দেশে পর্নো ভিডিও তৈরির অভিযোগ- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৮
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় শেকলে বেঁধে রেখে এক তরুণীকে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ভবন থেকে ৯৯৯ এর কলে শিকলবন্দী অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় এক নারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত চারজন হলেন সান (২৬), হিমেল (২৭) রকি (২৯) ও সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। দুষ্কৃতকারীরা তরুণীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে বলে পুলিশ জানায়।
গতকাল সোমবার ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ভবন থেকে ৯৯৯ এর কলে শিকলবন্দী অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ভুক্তভোগী তরুণী জানান, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ এবং পরে তারা অন্যত্র বিয়ে করায় ওই তরুণী তার বড় বোনের বাসায় থাকত। সে সময় ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদ নামের এক ব্যারিস্টারের সাথে তার পরিচয় হয়। ব্যারিস্টার মাসুদের সাথে লিভ টুগেদার করত সে। মাসুদ বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকত। দেশে আসলে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর সাথে থাকত। পরে মাসুদের মাধ্যমে এক প্রবাসীর স্ত্রী সালমা ওরফে ঝুমুরের সাথে পরিচয় হয়। সালমার সাথে নবীনগরের ভাড়া ফ্ল্যাটে ওঠে ওই তরুণী। তাদের সব খরচ বহন করত ব্যারিস্টার মাসুদ।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আসামি সালমা ও ভুক্তভোগী তরুণী এক সাথে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করত। সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে মোহাম্মদপুর গ্রিন সিটি এলাকায় ঘুরতে গিয়ে আসামি হিমেল ও সানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী তরুণীকে নিয়ে সালমা, হিমেল ও সান ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেয়। একপর্যায়ে আসামি সানের সাথে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সুবাদে হিমেল ও সান ভিকটিমের বাসায় আসা-যাওয়া করত। এ দিকে সানের সাথে ভুক্তভোগী তরুণীর সম্পর্কের বিষয়টি ব্যারিস্টার মাসুদকে জানান সালমা। ব্যারিস্টার মাসুদ এতে ক্ষিপ্ত হন এবং ভুক্তভোগী তরুণীকে শিক্ষা দিতে হবে বলে সালমাকে জানান। মাসুদ সালমাকে বলেন ওই তরুণীকে আটক করে তার পর্নো ভিডিও ধারণ করতে হবে। মাসুদের পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে আটক এবং পর্নো ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি হিমেল, সান ও রকির সাথে শেয়ার করে।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণীর বাসায় আসামি সান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি সালমা রুমে গোপন ক্যামেরা স্থাপন করে ভিডিও ধারণ করে। পরে সান একাধিকবার ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৫ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী তরুণীর বাসায় এসে তাকে সারপ্রাইজ দেবে জানিয়ে তাকে চোখ বন্ধ করতে বলে। চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে তার হাত পা বেঁধে ফেলে এবং মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয় সান ও হিমেল। হিমেল ভুক্তভোগী নারীকে একটি রুমে আটকে রেখে পাহারা দেয়। কিছুক্ষণ পর হিমেল ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। সালমা বাইরে গিয়ে শেকল ও তালা কিনে নিয়ে আসে। ওই দিন বিকেলে আসামিরা ভুক্তভোগী তরুণীর হাতে ও পায়ে শেকল লাগিয়ে রুমের দরজা ও বাথরুমের দরজার সাথে আটকে রাখে। শুধু খাওয়ার সময় তরুণীর হাতের শেকল খুলে দিতো তারা। এর পর গত ৭ মার্চ রাতে আসামি রকি জোরপূর্বক ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে।
পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, গত ৮ মার্চ আসামিরা ভুক্তভোগী তরুণীকে পর্নো ভিডিও দেখায়। তাকে ভিডিওর মতো একই কাজ করতে বাধ্য করে। ব্যারিস্টার মাসুদের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামি সান, হিমেল, রকি ও সালমা এভাবে বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতন করে তাদের দেখানো পর্ণ ভিডিওর মতো করে আলাদা আলাদা ভিডিও ধারণ করে। প্রতিদিনের ধারণ করা ভিডিও আসামি সালমা ব্যারিস্টার মাসুদের কাছে পাঠায়। আসামিরা তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায় ও অমানুষিক আচরণ করে। গত ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় সালমা ভুক্তভোগী তরুণীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বাইরে যায়। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তার ঘুম ভেঙে গেলে বাসায় কেউ নেই বুঝতে পেরে সে জানালা দিয়ে চিৎকার দেয়। তার চিৎকার শুনে এক পথচারী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে সংবাদ দেয়। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ তাকে শিকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে।
পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন আছেন। ঘটনায় জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
এ দিকে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় চার আসামিকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল দুপুরে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালত এই আদেশ দেন। একই সাথে এই ঘটনায় জড়িত সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে তদন্ত কর্মকর্তাকে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর ফারুকুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেক আসামির তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, যত বড় ব্যক্তি হোক না কেন, সংশ্লিষ্টদের সবার নাম যেন অভিযোগপত্রে আসে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা