১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


পরিবেশবান্ধব ‘প্লাস্টিক ট্রে’ দিয়ে লবণ উৎপাদন

-


পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ‘প্লাস্টিক ট্রে’ পদ্ধতিতে সাগরের পানি দিয়ে লবণ উৎপাদন করে দেশে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার লবণ চাষিরা। এমন উদ্যোগ পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি বাড়তি মুনাফা অর্জনে সহায়ক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সনাতন ও পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনের চেয়ে নতুন এ পদ্ধতিতে অনেক কম খরচে আগের চেয়ে ৩০%-৫০% বেশি লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় আলী আকবর ডেইলে লবণ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এমনই একটি উদ্যোগ সবার নজর কেড়েছে। তিনি এক একর জমিতে এ পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করছেন। আলী আকবর ডেইলের মোহাম্মদ মিরাজ উদ্দিন জানান, সনাতন ও পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের ট্রে পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করলে তিন দিনের মধ্যে লবণ পাওয়া যায়। লবণও হয় ময়লামুক্ত, ধবধবে সাদা ও মোটা দানা। এই লবণ সাধারণ লবণের চেয়ে তেজস্ক্রিয়তাও বেশি। তাছাড়া লবণ উৎপাদন খরচও হয় অনেক কম।


পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করলে প্রতি একরে ৩০০ মণ পর্যন্ত লবণ উৎপাদন করা যায়। আর প্লাস্টিকের ট্রে সাহায্যে লবণ উৎপাদন করলে প্রতি একরে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ মণ লবণ পাওয়া যায়। আর প্রতি একর লবণ উৎপাদন পলিথিন পদ্ধতি করলে যেখানে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে প্লাস্টিকের ট্রে পদ্ধতিতে লাগে মাত্র দুই হাজার টাকা। ফলে আগামী মৌসুমে এ পদ্ধতিতে ব্যাপকভিত্তিতে লবণ চাষের সম্ভবাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে লবণ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য উপকূলজুড়ে এ নতুন পদ্ধতির লবণ চাষকে উৎসাহিত করতে কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন বোর্ড, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতর ও এনজিও পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথভাবে কাজ শুরু করছে। পাশাপাশি জ্বালানি খরচ বাঁচাতে লবণ চাষিদের বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে সোলার সিস্টেম। লবণ মাঠে এই সোলার সিস্টেম বসিয়ে নলকূপ থেকে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে সহজে লবণ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন হলে বাংলাদেশ লবণ উৎপাদনে কেবল স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে না, দেশে নতুন বিপ্লব তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মিরাজ উদ্দিন জানান, গত মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের টার্গেট ছিল ২৩ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ উৎপাদন ঘাটতি ছিল ২১% এর বেশি। আর চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।
বিসিক সূত্র মতে, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত সময়ে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলীয় জমিতে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি আটকে রেখে এবং তা রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় লবণ। দেশের প্রায় ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণের চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে বাঁশখালীর আট হাজার ১৭৬ একর জমি ছাড়া বাকি জমি কক্সবাজারের।


সূত্র মতে, গত বছর কক্সবাজারে সাত উপজেলার ৫৫ হাজার ১১৪ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে কুতুবদিয়ার ছয় হাজার ৫৬৩ একর, পেকুয়ার ৯ হাজার ৮৪৫ একর, টেকনাফের তিন হাজার ৯৪৫ একর, চকরিয়ার ১০ হাজার ৬২০ একর, কক্সবাজার সদরের তিন হাজার ৩৩৮ একর, ঈদগাঁওর চার হাজার ৬৯১ একর এবং মহেশখালীর ১৬ হাজার ১৮ একর জমি রয়েছে। এ বছর এসব জমি ছাড়াও আরো নতুন জমিতে লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে বিসিক। তবে কক্সবাজারের ৯ উপজেলার মধ্যে রামু ও উখিয়াতে লবণ উৎপাদিত হয় না।
কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপমহাব্যবস্থাপক ড. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র প্রাথমিকভাবে কুতুবদিয়াতে চাষিদের দিয়ে পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক ট্রে পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন করা যে সম্ভব তা দেখিয়ে দিয়েছেন। এতে চাষিও অতিরিক্ত সুফল ও পাচ্ছেন। তাদের সাথে পরিবেশ অধিদফতর, বিসিক ও পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের যুগপৎভাবে কাজ করছে লবণচাষিদের ভাগ্য উন্নয়নে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, প্লাস্টিক ট্রে পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এই পদ্ধতি লবণ শিল্প ও জাতীয় অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এনজিও পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র সহকারী পরিচালক মনিরুজ্জামান জানান, লবণ শিল্প ও লবণ চাষিদের পাশে দাঁড়িয়ে এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র যেই প্রকল্প হাতে নিয়েছে।


কক্সবাজারে সেমিনার অনুষ্ঠিত
গত মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার শহরের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ বিষয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। পদক্ষেপ মানবিক এর উদ্যোগে সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্টের আয়োজিত সেমিনারে প্রান্তিক চাষিদের নানা সুবিধা-অসুবিধা ও লবণ শিল্পে সম্ভাবনার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেমিনারে আলোচনায় পরিবেশ সংরক্ষণ করে পলিথিন মুক্ত লবণ উৎপাদন ক্ষেত্রে এমন সমাধানসূত্র বের করার জোর পদক্ষেপ নেয়ার মত দেন। সেমিনারে মাঠপর্যায়ে লবণের মূল্য কমে যাওয়া, চাষিদের কষ্ট, কিভাবে লবণ শিল্পে লাভবান হওয়া যাবে এবং চলতি মৌসুমে চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
সভায় আলোচনায় অংশ নেন, কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া, কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া প্রমুখ। এতে লবণ মিল মালিকসহ শতাধিক লবণচাষি উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement