১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


হিন্দু শিক্ষককে মাদরাসার প্রিন্সিপাল নিয়োগের প্রতিবাদ বিভিন্ন সংগঠনের

-

টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা বিষয়টির সমাধান ও মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রাখার স্বার্থে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনতিবিলম্বে নীতিমালা ও অন্যান্য নথিপত্র সংশোধন করে স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ : টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো: মোস্তফা খান ও মহাসচিব মাওলানা আনোয়ার হোসাইন। এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল নিয়োগ করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে। মাদরাসার প্রিন্সিপাল গতানুতিক কোনো পদ পদবী নয়। মাদরাসার প্রিন্সিপাল পদবীর সাথে আন্তরিক বোধ ও বিশ্বাস তথা ঈমান জড়িত। আরবি ভাষা জ্ঞান, কোরআন-সুন্নাহর পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। সেই সাথে কোরআন ও হাদিসের উপর পরিপূর্ণ আমল থাকতে হবে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে মাদরাসার প্রিন্সিপাল পদে নিযুক্ত করে ইসলামী শিক্ষা তথা কোরআন-সুন্নাহর সাথে চরম বেয়াদবি করা হয়েছে। নেতৃদ্বয় বলেন, মাদরাসার শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রাখার নিমিত্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনতিবিলম্বে নীতিমালা ও অন্যান্য নথিপত্র সংশোধনপূর্বক স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি : সংগঠনের সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল হক টাঙ্গাইলের দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মের বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব প্রদান বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা থাকতে হবে। মাদ্রাসা হতে পাসকৃত কোনো আলেমকে নিয়োগ দেয়ার নীতিমালা থাকতে হবে। যে কাউকে মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস : টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যুগযুগ ধরে কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও আধুনিক বিষয়াদি শিক্ষা দিয়ে আসছে। নৈতিকতাসম্পন্ন জাতি গঠনে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বিষয় হলো টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করা। এটা কোনোভাবে মানা যায় না। বিষয়টির সমাধান ও মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রাখার স্বার্থে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনতিবিলম্বে নীতিমালা ও অন্যান্য নথিপত্র সংশোধনপূর্বক স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান। মাওলানা জালালুদ্দীন মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতিসহ পরিচালনা কমিটির সব সদস্যকে অবিলম্বে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল পদে হিন্দু অধ্যাপকের নিয়োগ বাতিল করে প্রকৃত আলেমকে দায়িত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।
ইসলামী আন্দোলন : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, টাঙ্গাইলের দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মের বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব প্রদান করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। মুসলমানদের সন্তানরা ইসলামী শিক্ষা ও মূল্যবোধ গ্রহণ করবে মাদ্রাসা থেকে। সে মাদ্রাসার প্রধান যদি একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হন তাহলে সেটা তামাশা ছাড়া আর কিছুই হবে না। দেশে এতই আকাল পড়ে গেল যে একটা মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দেয়ার জন্য একজন আলেম পাওয়া যাচ্ছে না! এটা অবিশ্বাস্য। যা করা হয়েছে এটা দেশের অন্যান্য সেক্টরের মতো মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা ইসলাম ধর্মের সাথে প্রহসন করার শামিল। আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হল যদি ওই প্রতিষ্ঠানে যোগ্য কোনো আলেম পাওয়া না যায় তাহলে অস্থায়ীভাবে অন্য কোনো আলেমকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করতে হবে। মাদরাসায় অন্তত ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর কাউকে এ পদে বরদাস্ত করা হবে না।
জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশ : ‘জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আলহাজ হযরত মাওলানা বেলায়েত হোসাইন আল-ফিরোজী টাঙ্গাইলের ‘দারুল উলুম কামিল মাদরাসার’ অধ্যক্ষ হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী গোপাল চন্দ্র বসাককে নিয়োগ দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। বিবৃতেতে তিনি আরো বলেন, যে বা যারা গোপাল চন্দ্র বসাককে ষড়যন্ত্র করে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে তাদেরও খুঁজে বের করে অপসারণ করতে হবে। কেননা তারা এদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে জাতিগত সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়।
-মুসলিম লীগ : টাঙ্গাইল দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলা অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিযুক্ত করায় তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। দলীয় সভাপতি এড. বদরুদ্দোজা সুজা, মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদার, মোঃ আনোয়ার হোসেন আবুড়ি গতকাল শুক্রবার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, অতি উৎসাহী কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকর্তার কা--জ্ঞানশূন্য এ সিদ্ধান্ত বিশেষ কোন এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত। এই অতি উৎসাহী শ্রেণীকে চিহ্নিত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা হলে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে ঢাল বানিয়ে ভবিষ্যতে এরা মসজিদ/মন্দির/গির্জা/প্যাগোডা পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদের জন্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নিয়োগের মত অবাস্তব সুপারিশ করে বসতে পারে। সকল ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা চলে না। এ ঘটনায় সরকারের ভাবমর্যাদা চরম ভাবে ক্ষুণœ হয়েছে। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসায় প্রথা অনুযায়ী নতুন প্রিন্সিপাল নিয়োগ ও দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যাতে বরাবরের মত নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে পরিচালিত হতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
জৈনপুরী পীর : সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জৈনপুরী পীর এক বিবৃতিতে বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর, আর মাদরাসাহ নবিজী (সা.)-এর ঘর, এই দুটি ঘরের ধারক, বাহক হবেন মুমিন মুসলমান। অথচ বাংলাদেশে ধর্মীয় শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ একটি কামিল মাদরাসার প্রধান কী করে বিধর্মী হতে পারে? এটা কিছুতেই বোধগম্য না। এটা ইসলাম ও পবিত্র ধর্মীয় শিক্ষা ও নবিজীর ঘরের অবমাননা ও হেয়প্রতিপন্ন করা ছাড়া আর কিছুই না। এহেন হীন ও অবাঞ্ছনীয় পদক্ষেপ যারা নিয়েছেন তারা অতিসত্বর এই ভুল সিদ্ধান্ত বর্জন করে সঠিক পথে ফিরে আসুন! যদি কোনো নীতিমালা বা ধারা তৈরি করা হয়ে থাকে তা বাতিল করুন। অন্যথায় স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা ও প্রিয় রাসূল (সা.) আপনাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং এই দেশের ঈমানদার জনগণ আপনাদের ছাড় দিবেন না।


আরো সংবাদ



premium cement