১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কুমিল্লায় পুলিশের সাথে কোটাবিরোধীদের সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ২০

পুলিশের সাথে কুবি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ - ছবি : নয়া দিগন্ত

পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। পথে পুলিশের হামলায় একাধিক গণমাধ্যমকর্মীসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহন হন। যার মধ্যে সাতজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের সামনে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করার উদ্দেশে বের হলে পুলিশের বাঁধায় এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ ও ডিবির প্রায় শতাধিক সদস্য শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে গেলে প্রথমে ধস্তাধস্তি হয়। এরপর আবাসিক হল ও মেসের প্রায় সাত-আট শ’ শিক্ষার্থী এসে যুক্ত হয়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ করে। এরপর শর্টগান দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলির পাশাপাশি টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। যা কিছুক্ষণপর তুমুল সংঘর্ষে রুপ নেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ করে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা যায়।

এতে সহকারী পুলিশসুপারসহ পাঁচ-সাতজন পুলিশ সদস্য ও সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত আহন হন। পরবর্তী পুলিশের আঘাতে দৈনিক নয়া দিগন্তের সংবাদদাতা মানছুর আলম অন্তর, আমাদের সময়ের অনন মজুমদার, চ্যানেল আই অনলাইনের সৌরভ সিদ্দিকী ও ইমরান, রেদোয়ান, হুমায়ুন, কাউসারসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়। পরে তাদের অ্যাম্বুলেন্স যোগে কুমিল্লা মেডিক্যালে পাঠানো হয়।

আহত শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবির বলেন, কোটবাড়ি বিশ্বরোড অবরোধের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে আসার একপর্যায়ে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়, আমরা কয়েকজন ব্যারিকেড ভেদ করে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করলে আমি পড়ে যাই, ওই অবস্থায়ও পুলিশ আমাকে লাথি মারে। আমাকে পাঁচটা বারি মারে। আমি দৌড় দিলেও পুলিশ পেছন থেকে মারতে থাকে।

এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে কুমিল্লা পলিটেকনিক, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক ত্যাগ করতে বললে শিক্ষার্থীরা ‘ধিক্কার ধিক্কার, প্রশাসন ধিক্কার’, ‘প্রক্টরের চামড়া তুলে নিব আমরা’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’সহ নানা স্লোগান দিয়ে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ সার্কেলের অতিরিক্ত এএসপি এমরানুল হক মারুফ বলেন, প্রতিদিন এভাবে রাস্তা ব্লক করে রাখা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা আজ শিক্ষার্থীদের বাধা দিতে আমরা এখানে এসেছি। শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয়ে আমরা পরে ব্যবস্থা নিব।

কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আমরা কথা বলব বলে এড়িয়ে যান।

কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক পদে ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমাদের এইখানে সর্বমোট আটজন আহত অবস্থায় এসেছে। এর মধ্যে দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। বাকি ছয়জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে। এছাড়াও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একজন শিক্ষার্থীর মারা যাওয়ার খবরটি সঠিক নয় বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, পুলিশের যেসকল সদস্য শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলব। এখানে আমার কোনো ইন্ধন নেই।

এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত এখনো (রাত ৯টা ১০ মিনিট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া না হলে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক ত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement