১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

লক্ষ্মীপুরে ভাইস চেয়ারম্যানের ঘোষণা : সরকারি সার-বীজ বিএনপি-জামায়াত পাবে না!

কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার বিতরণ - ছবি : নয়া দিগন্ত

সরকার প্রণোদনা দিচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের জন্য। নির্দিষ্ট কোনো দল বা গোষ্ঠীর জন্য নয়। অথচ উচ্চ ফলনশীল এসব বীজ ও সার আওয়ামী লীগের কর্মী ব্যতীত অন্যদের বিতরণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের এক ভাইস চেয়ারম্যান। অভিযোগ উঠেছে ভুক্তভোগী কৃষকদের ‘বিএনপি-জামায়াত’ কর্মী আখ্যা দিয়ে প্রণোদনা প্রাপ্তির কার্ড রেখে দেন ওই চেয়ারম্যান।

অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পরিষদের নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ পাটোয়ারী। ভুক্তভোগী কৃষক একই উপজেলার হাজীরপাড়া ইউনিয়নের চর মোহাম্মদপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মনির হোসেন। অপর কৃষক একই এলাকার আবু তাহেরের ছেলে আবু ছিদ্দিক।

জানা গেছে, সদর উপজেলার ৬ হাজার ৫৯ জন কৃষকের মধ্যে আমন চাষে প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এতে প্রত্যেক কৃষককে প্রতি বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি উচ্চ ফলনশীল আমন বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার বিনামূল্যে প্রদান করবেন।

প্রণোদনা বিতরণের কার্যক্রম শনিবার (৬ জুলাই) সকালে সাড়ে ১১টায় উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু। এরপর থেকে প্রণোদনাপ্রাপ্ত কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করে উপজেলা কৃষি বিভাগ। তবে উদ্বোধন-পরবর্তী ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ পাটোয়ারী ও তার সহযোগী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো: আলম আওয়ামী লীগ কর্মী ছাড়া অন্যদের সার-বীজ না দেয়ার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি দুজন কৃষকের প্রণোদনা প্রাপ্তি কার্ড রেখে দেন তারা। বিষয়টি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সামনে ঘটলেও তারা কোনো প্রতিবাদ করেননি। তবে পরে ঘটনাস্থল (উপজেলা চত্বর) থেকে ওই ভাইস চেয়ারম্যান চলে গেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির (মেম্বার) হস্তক্ষেপে প্রণোদনা উপকরণ পান কৃষকরা।

ভুক্তভোগী কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমি কৃষি কাজ করি। আমার বাবা ও দাদারা একই কাজ করেছেন। কৃষক হওয়ায় আমন চাষে প্রণোদনা প্রাপ্তির কার্ড পেয়েছি। আজ উপজেলায় সার-বীজ নিতে এলে আমাদের কার্ডগুলো ভাইস চেয়ারম্যান ও তার সহযোগী রেখে দেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যদের সরকারের দেয়া প্রণোদনার সার-বীজ দেয়া হবে না।’

অপর কৃষক আবু ছিদ্দিক বলেন, ‘আজ সকালে সার-বীজ নেয়ার জন্য উপজেলায় মেম্বারের দেয়া কার্ড নিয়ে এসেছি। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার সহযোগী আমাদের কার্ড আটকিয়ে রাখছে। আমরা নাকি বিএনপি-জামায়াতের লোক। এজন্য আমাদের সরকারি সার-বীজ দেয়া হবে না। অথচ আমরাও আওয়ামী লীগ করি। সদর আসনের এমপির বাড়ির পাশে আমাদের বাড়ি। তিনি মেম্বারের মাধ্যমে আমাদের কার্ডগুলো দিয়েছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেন, ‘ফেসবুকে দেখলাম একজন ব্যক্তি একাধিক কৃষকের স্বাক্ষর দিয়ে সার ও বীজ নিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনা জানতে চেয়েছি ও সতর্ক করেছি কৃষি কর্মকর্তাদের। যাতে ভবিষ্যতে অনিয়মটি না হয়। কারণ, প্রকৃত কৃষকের হাতে প্রণোদনা পৌঁছে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। ভুয়া তালিকা দেখিয়ে লুট করার কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার কৃষিবান্ধব বলে বিনামূল্যে সার ও বীজ দিচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত কৃষক যদি ওই সুবিধা না পায় তাহলে সরকারের পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের কর্মী ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে কৃষি খাতে সরকারের সুবিধাগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে বিতরণের তদারকি রাখা। আজও সেটি করেছিলাম। কিন্তু কেউ কেউ এটাকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হাসান ইমাম বলেন, ‘আমন চাষে সরকার প্রণোদনা দিয়েছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার জন্য। নির্দিষ্ট কোনো দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে বণ্টনের জন্য নয়। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কেন ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ঘটনা পরবর্তী ভুক্তভোগী কৃষকদের সার ও বীজ দেয়া হয়েছে।’


আরো সংবাদ



premium cement