কক্সবাজার থেকে ২০০ টন মালামাল নিয়ে জাহাজ গেছে সেন্টমার্টিনে

মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে আট দিন ধরে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দা গত তিন-চার দিন ধরে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সঙ্কটে পড়েছেন।

শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে তাদের সঙ্কট থেকে মুক্তি দিতে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে ‘এমভি বারো আউলিয়া’ নামে একটি জাহাজে করে খাদ্য ও নিত্যপণ্য পাঠানো হয়েছে দ্বীপটিতে।

পরে দুপুর আড়াইটার দিকে মালামাল নিয়ে জাহাজটি সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের উদ্দেশে ঘাট ছেড়ে যায়।

সকাল ১০টার পর থেকেই বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে এমভি বারো আউলিয়া জাহাজে তোলা হয় চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ নানা ধরণের ভোগ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো: ইয়ামিন হোসেন জানান দ্বীপের জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে মালামাল নিয়ে জাহাজটি পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারে কাজে এসে আটকে পড়া সেন্টমার্টিনের ১৫০ বাসিন্দা এই জাহাজে করে ফিরে গেছে। এর পাশাপাশি সেন্টমার্টিন দ্বীপে কর্মরত বিজিবি এবং কোস্ট গার্ডের সদস্যরাও তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য নিয়ে এই জাহাজে করে কর্মস্থলে গেছে।

এডিএম জানান, এই জাহাজে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব মালামালের পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিএফ চাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ঈদের উপহার এবং পাঁচটি কোরবানির পশু পাঠানো হয়েছে।

ঘাটে অপেক্ষামান সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চিকিৎসা এবং পারিবারিক বিভিন্ন কাজে কক্সবাজার শহরে এসে তারা আটকে পড়েছিল। ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তারা বাড়িতে ফিরতে পারছিল না। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পেরে তারা খুশি।

তারা আরো জানান, সেন্টমার্টিন দ্বীপে গত চার-পাঁচদিন ধরে কাঁচা শাক সবজি একেবারে নেই। নিত্য পণ্য পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের তীব্র সঙ্কট।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, ‘গত এক সপ্তাহ ধরে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশী ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। এ কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে দ্বীপটিতে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কক্সবাজার থেকে খাদ্যপণ্য নিয়ে জাহাজ আসছে। একই সঙ্গে কক্সবাজারে আটকে পড়া বাসিন্দারাও ফিরছেন।’

মিয়ানমারের রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের আঁচ লাগছে এপারের বাংলাদেশের সীমান্তের গ্রামগুলোতে। বাংলাদেশী ট্রলারগুলো লক্ষ্য করে সীমান্তের ওপর থেকে কারা গুলি করছে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সাত দিন পর বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সেন্টমার্টিন থেকে তিনটি ট্রলারে করে দুই শতাধিক হোটেল শ্রমিক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ টেকনাফ পৌঁছান। এ সময় টেকনাফ থেকে বিকল্প সাগরপথে চারটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক লোক সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হন।

তবে নাফ নদী হয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন্স নৌপথে এখনো ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে।