সরাইলে অটোরিকশা চালিয়ে পড়ালেখা করছেন রাজু, হতে চান ইঞ্জিনিয়ার
- এম এ করিম, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
- ০৯ জুন ২০২৪, ১০:৫৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে নিচ্ছেন কলেজছাত্র রাজু আহমেদ (১৯)। উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নেত টিঘর গ্রামের পূর্ব পাড়ার মাসুম মিয়ার দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রাজু সবার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রাজুর বাবা মাসুম মিয়া স্ট্রোক করে কর্মক্ষমতা হারিয়ে প্যারালাইজড হয়ে নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী থাকায় বিগত পাঁচ বছর ধরে অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের ব্যয়ভার বহনসহ নিজের পড়ালেখাকে এগিয়ে নিচ্ছেন রাজু।
একই সাথে স্থানীয় একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত তার ছোট ভাই রিফাত (১৪) ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছোট বোন ইভার (১২) পড়ালেখার খরচও বহন করছে রাজু। এক দিকে বাবার অসুস্থতা, অন্যদিকে নিজের ও ছোট দুই ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ সামলানোসহ সীমিত আয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করা রাজু দারিদ্র্যর সাথে যুদ্ধ করে হলেও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান।
রাজু জানান, ২০১৭ সালে পানিশ্বর সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন থেকে পিএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করেন তিনি। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বসবাসকারী তার চাচা জুবায়ের আহমেদের বাসায় থেকে ভাদুঘর মাহবুবুল হুদা পৌর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে পড়ালেখা করেন। পরে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জেলা শহরের নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণী পাশ করেন। এ সময় তার চাচা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেলে শহর ছেড়ে তার চাচা পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে যান। এতে শহরে থাকার মতো সামর্থ না থাকায় একই সাথে রাজুও গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। পরে সরাইল কালিকচ্ছ পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন রাজু। এ সময় স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে বাড়িতে শয্যাশায়ী হন তার বাবা। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রাজুর বাবা অসুস্থ হওয়ায় তাদের সংসারে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়, পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় রাজুর। পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহী ও মেধাবী রাজু অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন। অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি কালিকচ্ছ পাঠশালা উচ্চ বিদ্যালয় ২০২৩ সালে জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন।
পরে সরাইল সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন, বর্তমানে প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি।
রাজু বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে অটোরিকশা চালিয়েই সংসারের ব্যয়ভার বহনের পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত আসতে তেমন কোনো আর্থিক সহযোগিতা পায়নি। ইচ্ছা আছে সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।’
সীমিত আয়ে স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা অজানা আতঙ্কে রাজু। বাবার চিকিৎসা খরচ বহনসহ নিজের পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।