বসুরহাটে আলো ছড়াচ্ছে একটি পাঠাগার
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ০৮ জুন ২০২৪, ২৩:২৭
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট এলাকার একটি পাঠাগার স্থানীয় মানুষের চেতনা ও মনন আলোকিত করার বাতিঘর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে একটি প্রজন্মকে বইমুখী করে জ্ঞানচর্চায়, নতুন জ্ঞানের সৃষ্টিতে এবং সমাজমুখী করে মননশীলতায় ঋদ্ধ করছে। মাত্র তিন বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ‘বসুরহাট পাঠাগার’ এলাকার একটি জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গঠনে বড় ভূমিকা রাখছে।
এলাকার যুবসমাজকে মাদকের আসক্তি, মোবাইল নিয়ে ব্যস্ততা, মোবাইল গেমের করাল গ্রাস, বোহেমিয়ান জীবন যাপন, উচ্ছৃঙ্খলতার বদলে পাঠাগারমুখী করছে এই পাঠাগার। বই পড়ার পাশাপাশি জ্ঞানের প্রতিযোগিতা, গুণিজন সম্বর্ধনা, বৃত্তি প্রদান, কবিতা আবৃত্তি, বসুমতি পাঠচক্র, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, কুসংস্কারমুক্ত, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গঠনসহ বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা বৈঠক হয়ে থাকে।
‘অঙ্কুরিত প্রতিভার সন্ধানে’ নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাঠাগারটি শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছে। করছে সামাজিক সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। পাঠাগার ঘিরে গড়ে উঠেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
২০২১ সালের আগস্টে নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আলেকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে বসুরহাট পাঠাগারটি প্রতিষ্ঠায় মূল ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সামাজ সেবক, জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ খাজা মোহাম্মদ কাজল। তিনিই প্রধান পৃষ্ঠপোষক। কাজলের সাথে আছেন আরেক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইফতেখার হোসেন। আরেক উদ্যোক্তা ছিলেন মো: শাহাদাত হোসেন সোহাগ।
সম্প্রতি তৃতীয় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বসুরহাট পাঠাগার। এরমধ্যে আগামী ১০ জুন বসুরহাট পৌরসভার খাজা মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় পাঠাগার মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হবে। ‘ক' বিভাগে স্কুল ও মাদরাসার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতিযোগীরা আবৃত্তি করবেন কবি নির্মলেন্দু গুণের বিখ্যাত কবিতা ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো এবং কবি সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’।
‘খ' বিভাগে কলেজ ও আলিম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী ও কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা। ‘গ' বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফাজিল ও কামিল স্তরের শিক্ষার্থীরা জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন এবং কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করবেন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে পুরস্কার।
প্রধান পৃষ্ঠপোষক,‘জীবনের বাঁকে' গ্রন্থের লেখক মোহাম্মদ কাজল বলেন, এই পাঠাগারটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সৃজনশীল ব্যক্তিদের মনন ও মেধা বিকাশের সময়োপযোগী একটি পাঠশালা হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিবিধ প্রকারের গ্রন্থ পাঠ করে শিক্ষার্থী, তরুন-যুবকসহ সব শ্রেণির মানুষ জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করছেন। অনেক মানুষ আছেন, যারা বই পড়তে ভালোবাসেন অথচ নিয়মিত বই কিনে পড়ার সামর্থ্য নেই, তাদের জন্য সহজে বই পড়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে এই পাঠাগারের মাধ্যমে।
মোহাম্মদ কাজল আরো বলেন, যেখানে এই অস্থির-যান্ত্রিক সময়ে তরুণ-তরুণীরা বই পড়ে না, সুকুমারবৃত্তি-সংস্কৃতি চর্চা করে না, অহোরাত্র মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে, কিশোর গ্যাং সৃস্টি হচ্ছে, সেখানে এই পাঠাগার প্রজন্মকে বদলে দিতে ভূমিকা রাখছে। তাদেরকে বইমুখী, সমাজমুখী, মননশীল করছে। দেশের প্রতিটি এলাকায় এমন একটি করে পাঠাগার স্থাপিত হলে বদলে যেতে পারে চলমান সামাজিক অস্থিরতা, ক্ষয়িষ্ণু পরিবেশ। একটি জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ-রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা করতে বড় মাত্রায় ভূমিকা রাখে পাঠাগার।
বসুরহাট পাঠাগারের বর্তমান সভাপতি নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বামনী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রাহবার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক লেখক গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, রচনাপ্রতিযোগিতা, পাঠচক্র, প্রশিক্ষণ, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ গঠনে সাধ্যমতো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ সমাজকে পাঠাগারমুখী করার চেষ্টা করছি। কিন্তু লাইব্রেরি হিসেবে এর অবকাঠামোগত অবস্থা আরো উন্নত করতে হবে। আশাকরি তা পারবো ইনশাআল্লাহ। মূলত: শিশু-কিশোরদেরকে টার্গেট করে আমরা এগুচ্ছি।
তারা বলেন, বসুরহাট পাঠাগারের বর্তমান শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ভবন, বই, আর্থিক অনুদানসহ সমস্ত কিছুর পেছনে বড় অবদান মোহাম্মদ কাজলের। তার নিরবিচ্ছিন্ন আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজ পাঠাগারটি এলাকার বাতিঘরে রূপ নিয়েছে।