১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

চৌদ্দগ্রামে ধর্ষণসহ একাধিক মামলার আসামিকে পিটিয়ে হত্যা

চৌদ্দগ্রামে ধর্ষণসহ একাধিক মামলার আসামিকে পিটিয়ে হত্যা - প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ধর্ষণসহ একাধিক মামলার আসামি মহিন উদ্দিন প্রকাশ গাউয়াকে (২৮) গণপিটুনি দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (১ জুন) বিকেলে তথ্যটি নিশ্চিত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা। এর আগে শনিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।

মহিন উদ্দিন উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের খাটরা গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে।

জানা যায়, মহিন উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ দাবি করছে চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে তার স্ত্রী আকলিমা আক্তার লিমার দাবি, পূর্ব বিরোধের জের ধরে তাকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহিন উদ্দিন ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি ও ইভটিজিংসহ একাধিক মামলার আসামি। সাম্প্রতিক সময়ে সে জামিনে বের হয়ে আসে। শুক্রবার দিবাগত রাতে গুণবতী ইউনিয়নের চাপাচৌঁ গ্রামে সরোয়ার আলম নামের এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেল চুরি করে অন্যত্র লুকিয়ে রাখে। আবারো সে বাড়িতে গিয়ে তাদের একটি সিএনজি অটোরিকশা চুরি করার সময় সরোয়ারের পরিবারের সদস্যরা টের পেয়ে চোর বলে চিৎকার করে। এ সময় আশপাশের লোকজন মহিন উদ্দিনকে ধাওয়া করে একই এলাকার ধনড়া ঈদগাহ নামকস্থানে আটক করে গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে মারাত্মক আহত হলে মহিন উদ্দিনের ছোট বোন সালমা আক্তার ও তার স্বামী নাঈম খবর পায়। তারা তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কনকাপৈত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক মফিজুর রহমান বলেন, ‘মহিন উদ্দিন একজন চিহ্নিত চোর। শনিবার ভোরে ওই এলাকায় আবারো চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়ে। আমরা জাতীয় সেবা ৯৯৯-এ সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে উত্তেজিত জনতা তাকে গণপিটুনি দেয়। গণপিটুনিতে আহত হওয়ার পর স্বজনরা খবর পেয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়’।

নিহতের স্ত্রী আকলিমা আক্তার লিমা বলেন, ‘আমার স্বামী এক সময় খারাপ পথে চলাচল করত। সাম্প্রতিক সময়ে তার আরো একটি সন্তান দুনিয়াতে আসার সংবাদ পেয়ে সে সকল অপকর্ম ছেড়ে দিয়ে ভালো হয়ে যায়। সে চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন সড়কে সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকে। অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা খাটরা গ্রাম থেকে এসে চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ট্রেনিং সেন্টার নামকস্থানে ভাড়া বাসায় থাকি। শুক্রবার সকালে আমাকে নিয়ে সে মোটরসাইকেল যোগে পরিকোট এলাকায় যায়। সেখানে তার পূর্ব পরিচিত বন্ধু রুবেল ও রাজিব মোটরসাইকেলটি আটক করে চাদা দাবি করে। টাকা না দিলে মীর আহম্মেদ তোয়ান নামে এক সন্ত্রাসীর হাতে তুলে দিবে বলে ভয়ভীতি দেখায়। আমরা ভীতস্থ হয়ে ১১ হাজার টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে চৌদ্দগ্রামের বাসায় ফিরে আসি।

আকলিমা আক্তার লিমা আরো বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যায় তার মায়ের বাজার শেষ হয়ে যাওয়ায় মোটরসাইকেল যোগে বাজার নিয়ে সে পূনরায় খাটরা গ্রামে যায়। সেখান থেকে বোনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী দশবাহা গ্রামে যাওয়ার কথা বলে বের হয়। তারপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলেও কেউ রিসিভ করেনি। শনিবার ভোরে আমার বোন সালমা আক্তারের মাধ্যমে জানতে পারি, তাকে পিটুনি দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। আমি সংবাদ পেয়ে সেখানে মীর আহম্মেদ তোয়ানের সাথে দেখা করি। সে আমার সাথে বিভিন্ন টালবাহানা করে। একপর্যায়ে আমরা ধনড়া ঈদগাহ গিয়ে দেখি, মহিন উদ্দিন মাঠিতে পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। আকলিমা আক্তারের দাবি, তার স্বামী এক সময় খারাপ থাকলেও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সে সকল অপকর্ম ছেড়ে দেয়। তাকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী চুরির অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে’।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো: আসিফ ইকবাল বলেন, ‘গণপিটুনিতে আহত মহিন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে তার স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাকে আমাদের কোনো চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন হয়নি’।

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ একাধিক মামলা রয়েছে। শুক্রবার রাতে চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক করে গণপিটুনিতে সে আহত হয়। তার স্বজনরা উদ্ধার শেষে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়’।


আরো সংবাদ



premium cement