ঘূর্ণিঝড় রেমাল : হাতিয়ার সর্বত্র ক্ষতচিহ্ন
- হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা
- ২৮ মে ২০২৪, ১৯:৪৩, আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ১৯:৪৮
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সকল ইউনিয়ন। তিন দিন ধরে প্রবল জোয়ারে ভেসে গেছে নিঝুমদ্বীপের জাতীয় উদ্যানের চিত্রা হরিণসহ পুকুরের মাছ ও গবাদিপশু। অব্যাহত বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে দ্বীপের হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি। অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের চেয়েও রেমাল দীর্ঘ সময় ধরে ঝড়োবৃষ্টির তীব্রতা ছিল বেশি। টানা তিন দিনের বেশি জোয়ারে প্লাবিত করে ক্ষতবিক্ষত করেছে হাট বাজার দোকানপাট, রাস্তাঘাট।
তীব্র জোয়ারে নিঝুমদ্বীপ চরগাসিয়া ও ঢালচরে বেড়িবাঁধ না থাকায় ৭-৮ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে মানুষের ঘরবাড়িসহ ঘরের আসবাবপত্র তছনচ করে দিয়েছে। জোয়ারের তীব্রতায় ভেঙে গেছে পাকা ও কাঁচা রাস্তা। বারবার জোয়ারের আঘাতে রাস্তা ভেঙে খালে পরিণত হয়েছে। যার ফলে চলাচলে এখনো দূর্ভোগে পড়ছে দূর্গত এলাকার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ।
এ দিকে, ক্ষতবিক্ষত রাস্তা পার হতে গিয়ে নিঝুমদ্বীপে একটি শিশুর পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, হরণী ইউনিয়নের চরঘাসিয়ায় প্রায় ১৭ হাজার লোকের বসবাস। গত ১০ বছর ধরে এখানে বেড়িবাঁধ না থাকায় সোমবার দিবাগত রাতে ৮ ফুট জোয়ারে অনেকের ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দুর্ভোগে রয়েছে।
চরঘাসিয়া জনতা বাজারের তৈমুর হোসেন জানান, জোয়ারের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, মানুষের নতুন তৈরি করা ঘর ও ভেসে যায়। অনেকে ঘরের চালের ওপর উঠে আশ্রয় নেয়।
তিনি আরো জানান, রাত ১টার দিকে আসা জোয়ারে নিরুপায় হয়ে অনেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে এসে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আশ্রয় নেয়। সকালে এসে দেখে জোয়ারে বসতঘরটি ভিটা থেকে ভেসে গিয়ে জমিতে পেলেছে।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন জানান, এই দ্বীপের চারপাশে বেড়িবাঁধ না থাকায় গত দুই দিনে ও রাতে ৮ ফুট উচ্চতায় দু’বার করে প্লাবিত হয়েছে সবকটি গ্রাম। কিছু কিছু জায়গায় পানি নেমে গেলেও অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানির স্রোতে নামার বাজার থেকে মোক্তারিয়া ঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার প্রধান সড়কের অনেক অংশ ভেঙে খালে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নিঝুমদ্বীপের দক্ষিণ ও পূর্ব অংশে জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে অনেকের ঘরবাড়ি, গবাদিপশু। ভেসে গেছে বনের হরিণ।
এছাড়া প্রায় ১০০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক জোয়ারে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। একইভাবে জোয়ারের আঘাতে নলচিরা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাহিরে ঘাট এলাকায় প্রায় ১৫টি দোকান ঘর পানিতে ভেসে গেছে।
নলচিরা ঘাটের দোকানের মালিক সাদ্দাম হোসেন জানান, চোখের সামনে নিজের দোকান ঘরটি ভেসে যায়। ঢেউয়ের কারণে মালামাল চেষ্টা করেও রক্ষা করা যায়নি।
তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে জানা গেছে, প্রায় ১০০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা রাস্তা, আট হাজার হেক্টর ফসলি জমি, ২১৩টি গবাদিপশু, ছোট-বড় প্রায় ৭০০ পুকুর তলিয়ে যাওয়াসহ ৫০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী হাতিয়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতির একটি বিবরণ ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা জানান।
ওই বিবরণী অনুযায়ী হাতিয়াতে প্রায় ৫০ হাজার লোককে ক্ষতিগ্রস্ত দেখানো হয়েছে। ৩৫০০ কাঁচা ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রায় ১০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ভেঙে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।