১৬ জুন ২০২৪
`

আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার

আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেফতার - ছবি : নয়া দিগন্ত

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল্লাহকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গুলিসহ গ্রেফতার করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান-১৪-এপিবিএন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ভোরে উখিয়ার ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইরানি পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার আসমি হলেন উখিয়ার ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৫১ ব্লকের মোদাছেরের ছেলে আব্দুল্লাহ (৩২), তার বিরুদ্ধে উখিয়া-টেকনাফ থানায় আটটি হত্যা মামলা রয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ১৪ আর্মডস পুলিশ ব্যাটালিয়ানের সহ-অধিনায়ক আরেফিন জুয়েল।

আটক আসামির দেয়া তথ্যমতে দুটি বিদেশী পিস্তল, একটি দেশীয় তৈরি ওয়ান শুটারগান, মাঝারি সাইজের দুটি ওয়ান শুটারগান, রাইফেলের গুলি ২০ রাউন্ড, দুটি পিস্তলের গুলি, একটি শর্ট গানের কার্তুজ, ২০ রাউন্ড রাইফেলের গুলির খোসা ও তিনটি পিস্তলের গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

আরেফিন জুয়েল বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে উখিয়া উপজেলার ২০ এক্সটেনশন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি শেড থেকে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী আব্দুল্লাহকে গেফতার করতে সক্ষম হয়। পরে তার দেহ ব্যাগ তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরিণ চলমান সংঘাতে সীমান্তবাসি যেমন আতঙ্কে ঠিক তেমনি মিয়ানমারের নাগরিক আবংলাদেশে আশ্রিত উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের অপ্রীতিকর ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা চরম বিপাকে পড়েছেন। ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর গুলিবর্ষণ ও শেড ভাঙচুরের ঘটনায় চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

গুলিবিদ্ধরা হলেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪-এর নাদির হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহীম, আবু সামার ছেলে নুর হোসেন, আবুল খায়েরের ছেলে মোহামদ সেলিম ও আব্দুর রহিমের ছেলে মোহাম্মদ জোনায়েদ।

বুধবার (২২ মে) দুপুর ১২টার দিকে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে-৪ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ঘটনাস্থল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে একাধিক রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ রোহিঙ্গারা চরম অনিশ্চিয়তায় দিনাতিপাত করছেন।

মোহাম্মদ শফি উল্লাহ, আবুল বশর, সোলতান আহমেদসহ সাধারণ রোহিঙ্গারা জানান, দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা আমরা আতঙ্কে থাকি কখন কার বুক খালি হয়ে যায়। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সশস্ত্র একাধিক গ্রুপ রাতের বেলায় ঘরে ঢুকে তাদের উঠতি বয়সের ছেলেদের ধরে নিয়ে গিয়ে মিয়ানমারের মগবাগির হাতে তুলে দিচ্ছেন। ক্যাম্পে কারণে-অকারণে গুলি করছেন। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। রাতে ঘুমাতে পারিনা। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) গোলাগুলির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আহতরা অভিযোগ করেন। সাধারণ রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে অস্থিরতার জন্যে আরএসও এবং আরসা সন্ত্রাসী গ্রুপকে দায়ি করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকি এক ক্যাম্প মাঝি জানায়, গত তিন দিন ধরে আরএসওর সদস্যরা লম্বাশিয়া এলাকাসহ ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধধারণ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক তাদের সাথে মিয়ানমারের রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। সাধারণ রোহিঙ্গারা যেতে না চাইলে তাদের ওপর আরএসওর সদস্যরা গুলি বর্ষণ ও শেড ভাঙচুর করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিধনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো: ইকবাল বলেন, দুর্বৃত্তদের গুলিতে চার রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জেনেছি। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

এদিকে মিয়ানমারের ওপার থেকে সে দেশের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) ছোঁড়া গুলিতে এক বাংলাদেশী জেলে ঘুরুতর আহত হয়েছেন। গুলিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে তার এক পা। গত বুধবার সন্ধ্যায় টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নাফ নদীর বাংলাদেশ-মিয়ানমার জলসীমায় ১৮ নম্বর সীমান্তে পিলারের কাছে এই ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহাদাত সিরাজী। গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ হোসেন আলী (৫০) হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম শুক্কুর আলীর ছেলে।

হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহাদাত সিরাজী বলেন, সন্ধ্যায় ১৮ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে নাফ নদীতে মাছ ধরতে গেলে ওপার থেকে বাংলাদেশী জেলেদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হোসেন আলীর বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ডান পায়েও গুলি লেগেছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম লালু। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উখিয়া কুতুপালংয়ের একটি বেসরকারি হাসসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য হোসেন আলীকে চট্রগ্রাম প্রেরণ করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলের অপরপ্রান্তে মংডু জেলায় মিয়ানমারের সরকারি সীমান্ত বাহিনী বিজিপির চৌকি চলমান সংঘাতের অংশ হিসেবে মাস তিনেক আগেই নিজেদের দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি।

অপরদিকে মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধে অংশ নিতে চাপ প্রয়োগ নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সাধারণ রোহিঙ্গাদের ব্যাপক সংঘর্ষে নুরুল ইসলাম নামের এক স্থানীয় বাংলাদেশী যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আহত নুরুল ইসলাম উখিয়ার কুতুপালং এলাকার ছৈয়দ নুরের ছেলে।

এপিবিএন পুলিশের দাবি, মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধে অংশ নিতে চাপ প্রয়োগ করলে সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সাধারণ রোহিঙ্গাদের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল