এবার থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতির চেষ্টা
- বান্দরবান প্রতিনিধি
- ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:২৫, আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৩৮
বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংক লুটের পর একই ব্যাংকের এবং কৃষি ব্যাংকের থানচি উপজেলা শাখায়ও ডাকাতির চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, জিপগাড়িতে এসে প্রথমে থানচি বাজার ঘেরাও করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। পরে ব্যাংকের শাখা দুটিতে ডাকাতির চেষ্টা চালায় তারা। এ সময় তারা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মামুন জানান, দুর্বৃত্তরা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে। তবে এর পরিমাণ এখনো জানা যায়নি।
এর আগে, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ-এর ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি সশস্ত্র দল উপজেলা কমপ্লেক্স ঘেরাও করে সেখানে থাকা সোনালী ব্যাংকে লুটপাট চালায়। ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র ও ৪১৫ রাউন্ড গুলি তারা লুট করে। এ সময় ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। মারধর করা হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সন্ত্রাসীরা সোনালী ব্যাংকের ভোল্টটি ভাঙচুর করে। ব্যাংকের ওই ভল্টে এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা ছিল। ওই টাকা সন্ত্রাসীরা লুট করে নিয়েছে কি না- এ বিষয়ে সিআইডির একটি তদন্ত টিম পরীক্ষা করে দেখছে।
রুমা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ টহল দিচ্ছে। তবে কত টাকা লুট করে নিয়ে গেছে এ বিষয়ে এখনো তিনি কিছু জানাতে পারেননি।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। সেই সাথে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের কাছে থাকা অস্ত্রগুলো নিয়ে গেছে তারা।
সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছেন, মাসের প্রথম দিকে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়ার জন্য ওই ব্যাংকে প্রচুর টাকা জমা ছিল।
পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানিয়েছেন, একটি সন্ত্রাসী দল ব্যাংকে হামলা করে টাকা এবং অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। তবে কত টাকা লুট করা হয়েছে এবং কোন সন্ত্রাসী দল এ বিষয়ে তিনি এখনো বিস্তারিত কিছু জানেন জানাননি।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় রুমা উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল এবং সেই সাথে ওই সময়ে নামাজে ব্যস্ত ছিল ব্যাংকের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ এবং কর্মচারীরা। ঠিক এই সময়ে উপজেলা সদরের ব্যাথেল পাড়া এলাকা থেকে ৬০ থেকে ৭০ জনের সশস্ত্র একটি সন্ত্রাসী দল উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে সোনালী ব্যাংকে হানা দিয়ে অস্ত্র ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ওই এলাকায় যারা ছিল তাদেরকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেই সন্ত্রাসীরা। রুমা উপজেলা বাজার থেকে উপজেলা কমপ্লেক্স এবং সোনালী ব্যাংকটি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় সন্ত্রাসীরা এই সুযোগটি নিয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
স্থানীয়রা মনে করছেন, ঘটনাটি কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে এর আগে এই সংগঠনটি ব্যাংক ডাকাতি করবে বলে এরকম একটি কথা রটিয়ে পড়েছিল এলাকায়। এদিকে এ ঘটনার পর এলাকায় জনমনে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
জানা গেছে, এ ঘটনার পর জেলাশহর এবং উপজেলায় ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এটিএম বুথগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এদিকে শান্তি রক্ষা কমিটির সদস্যদের রাতে ডেকে কথা বলেছে গোয়েন্দা সংস্থা গুলো কর্মকর্তারা। এ ঘটনার সাথে কেএনএফ জড়িত কিনা এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে প্রশাসনে।
জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, লুটের টাকা কী পরিমাণ এটি এখনো পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়নি, যেহেতু ব্যাংক ম্যানেজারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পুরো বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে কেএনএফ এর সাথে শান্তি কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমঝোতা হলেও এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রুমার ব্যাথেল পাড়ায় সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত শান্তি কমিটির সাথে কেএনএফ-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংঘাতে না জড়ানো ও উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এ আলোচনার মধ্যেই এ ঘটনা নিয়ে প্রশাসনসহ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত এ ঘটনা নিয়ে কেএনএফের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা