১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পতনের তাণ্ডব থেকে বেরিয়ে পুঁজিবাজারে উত্থানের সেঞ্চুরি

-

- ৯৯ শতাংশ ক্রেতার ভিড়ে বিক্রেতা নিখোঁজ
- ১৯টি খাতের কোনোটিতেই বিক্রেতা ছিল না

সূচকের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখে সামনে অগ্রসর হচ্ছে পুঁজিবাজার। ভালো কিছুর প্রত্যাশায় বিনিয়োগকারীরা। গত প্রায় আড়াই বছর ধরে দেশের শেয়ারবাজার পতনের বৃত্তে আটকে রয়েছে। এই সময়ে বিনিয়োগকারী ও দেশবাসী দেখেছে পতনের তাণ্ডব। যদিও পতনের বহু সেঞ্চুরিও দেখেছে। বিনিয়োগকারীদের চোখেন পানি আর আহাজারি। গতকাল ডিএসইর সূচক বেড়েছে প্রায় ১২৪ পয়েন্ট এবং সিএসইতে ৩০৪ পয়েন্ট; যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডিএসইতে ৯২.১৭ শতাংশ কোম্পানিই দর বৃদ্ধিতে ছিল। সে হিসেবে বাজারে লেনদেন প্রত্যাশিত বাড়েনি। ১৯টি খাতের কোনোটিতেই বিক্রেতা ছিল না। ৯৩ শতাংশ ক্রেতা থাকলে ক্রয় চাপ ছিল ৯৯ শতাংশ। কিন্তু বিক্রেতাদের খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছিল না।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৭ হজার ১০৫ পয়েন্ট। তারপর থেকেই শেয়ারবাজারে শুরু হয় ধারাবাহিক পতন; যা চলতি সপ্তাহের প্রথমভাগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। গত ৩০ জুন ডিএসইর সূচক ছিল ৫ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে। সেই হিসাবে গত আড়াই বছরে ডিএসইর সূচক উধাও হয়ে গেছে এক হাজার ৭৭৭ পয়েন্ট। গত তিনদিনে সূচক ১৬৯ পয়েন্ট বেড়ে গতকাল দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৯৭ পয়েন্টে।
দিনের লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরু থেকেই বাজার গতকাল ইতিবাচক ছিল। একটি ভারসাম্যভাবে উঠতে থাকে। ডিএসইএক্স ১২৩.৭১ পয়েন্ট ফিরে পাওয়ায় সূচকটি এখন ৫ হাজার ৪৯৭.৫৬ পয়েন্টে, শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২.১৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ২০৮.৬৯ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক আরো ৩৮.৪০ পয়েন্ট পেয়ে এখন এক হাজার ৯৫১.৩৩ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬৫টি বা ৯২.১৭ শতাংশের। এখানে ২১৪টিই ছিল ভালো মৌল ভিত্তি সম্পন্ন এ শ্রেণীর কোম্পানি। দর পতনের ছিল ১৩টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ১৮টি কোম্পানি। ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০টির দর বেড়েছে, কমেছে একটির এবং ৬টির দর অপরিবর্তিত ছিল। ২৭ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৭টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৭৭০ কোটি ৭০ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বাজারমূল্যে। বাজারমূলধন ডিএসইর বেড়েছে ১.৩৯ শথাংশ বা নয় হাজার ১৯৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
ফ্লোর প্রাইসে পাঁচটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ব্লক মার্কেটে ৭২.৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ৯.৪২ শতাংশ। এসএমই বাজার সূচক (ডিএসএমইএক্স) ২১.৬৬ পয়েন্ট বেড়ে ১৪৭৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে এবং লেনদেন হয়েছে ১২.৭ কোটি টাকা; যা গত দিনের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেশি।
এ দিকে ডিএসই ব্লক মার্কেটে ৬৮টি কোম্পানি গতকাল লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির তিন কোটি ৯৭ লাখ ১২ হাজার ৪৬৫টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে মোট ৭২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে সাত কোম্পানির। কোম্পানিগুলো হলো- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, যমুনা অয়েল, আমান কটন, ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ড, লাভেলো আইসক্রিম এবং রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এই সাত কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকারও বেশি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের। ব্যাংকটির এক কোটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১৩ কোটি টাকায়।
অন্য দিকে চট্টগ্রাম ষ্টকের সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩০৬.৪৮ পয়েন্ট। আর সিএসসিএক্স বেড়েছে ১৮৫.৫২ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ১৯৪.৫১ পয়েন্ট। বাজারটিতে ৫৬ লাখ ৯ হাজার ৮৫৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ৫১ হাজার টাকায়। বুধবার লেনদেন হয় ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৪৭টি কোম্পানির মধ্যে ১৯৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক বাজার বিশ্লেষক রয়্যাল ক্যাপিটাল বলছে, শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) টানা তিন দিন ইতিবাচক ধারায় শেষ হয়েছে। প্রধান সূচক ১২৩.৭১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে সূচক ৫৫শ’ পয়েন্টের কাছাকাছি পৌঁছেছে। কিছুদিন যাবত মূল্যের দিক থেকে বেশ কমে যাওয়া মৌলভিত্তিক শেয়ারগুলোর পাশাপাশি টেকনিক্যালি অবমূল্যায়িত শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গিয়েছে; যা বাজারের সূচক ও লেনদেনে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। একই সাথে গতকাল লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় ৪২.৯ শতাংশ বা ২৩১ কোটি টাকা বেড়েছে। মূলধন গতদিনের তুলনায় ১.৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ভলিউম ৬১ শতাংশ এবং টার্নওভার ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। ১৯ টি সেক্টরের মধ্যে সবগুলো সেক্টরের বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement