বাজেট পেশের আগের দিন পুঁজিবাজারের ডিগবাজি
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০৫
- মুনাফা তুলে নিয়ে বিনিয়োগকারীরা বাজেটের অপেক্ষায়
- ঢাকায় কমলেও চট্টগ্রামে ১৫৯ কোটি টাকার লেনদেন
- ডিএসইর প্রধান সূচক দীর্ঘদিন টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেয়ার চেষ্টা করছে
জাতীয় বাজেট পেশের ঠিক আগের দিন দেশের পুঁজিবাজার আবারও ডিগবাজি দিলো। দুই দিন ইতিবাচক পথেই চলছিল। গতকাল ঘণ্টা দেড়েক লেনদেনের পরই পতনের পথ ধরে। দুই পুঁজিবাজারই গতকাল সূচক থেকে পয়েন্ট হারিয়েছে। বাজারের এই পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা মুনাফা কম হলেও তুলে নিচ্ছেন। অপেক্ষা করছেন বাজেটে কী ঘোষণা আছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন ৩৫.৭ শতাংশ বা ২১২ কোটি টাকা কম হলেও সিএসইতে ৭০.২৯ শতাংশ বা ৬৬ কোটি টাকা বেড়েছে। এ দিন লেনদেনে অংশ নেয়া ৬২.২১ শতাংশ কোম্পানি দরপতনের শিকার হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচক রয়েল ক্যাপিটাল বলছে, ট্রেজারি সিকিউরিটিজের এবং ব্যাংক আমানতের ক্রমবর্ধমান সুদ শঙ্কিত করছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের। তবে পতনেও বাজার মূলধন বেড়েছে ০.৫১ শতাংশ। ডিএসই প্রধান সূচক দীর্ঘদিন যাবত ৫ হাজার ২২০ পয়েন্টে টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেয়ার চেষ্টা করছে।
গতকালের বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুরু থেকেই লেনদেনে ছিল নেতিবাচক স্রোত। আড়াই ঘণ্টায় সবগুলো সূচকই পতনে ছিল। ডিএসইতে আড়াই ঘণ্টায় মাত্র ১৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় লেনদেন হয়েছে পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ২৭ হাজার ৪৬২টি শেয়ার। লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৯৮টি কোম্পানির মধ্যে ৯৮টির দর বৃদ্ধি ও ২৪৭টির বা ৬২.২১ শতাংশের দর কমেছে। দর অপরিবর্তিত ছিল ৫২টির। দরপতনের ক্ষেত্রে ১৩৯টি কোম্পানি ছিল এ শ্রেণীর।
ডিএসইএক্স আবার ২৩.১৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে পাঁচ হাজার ২২৪.৩৬ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭.২১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ১৩৫.৫২ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১.৮১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে এক হাজার ৮৫৪.৩৮ পয়েন্টে। ডিএসইতে গতকাল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪০টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৩৮১ কোটি ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টাকায়। আগের দিন মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৫৯৩ কোটি ৩ লাখ টাকার। ফলে গতকাল লেনদেন কমেছে ২১২ কোটি টাকা।
এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে গতকাল রূপালী ইন্সুরেন্সের প্রায় ২৪ কোটি টাকার শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে। এখানে ৪৩টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নেয়। এসব কোম্পানির ৬৬ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৮টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড হাতবদল হয়েছে মোট ৫৮ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতে দেখা গেছে ১০ কোম্পানির। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স, বিচ হ্যাচারি, এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্স, লাভেলো আইসক্রিম, ফাইন ফুডস, বিএসআরএম লিমিটেড, ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ, জেএমআই হসপিটাল, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড। এই ১০ কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকারও বেশি। রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্সের ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৭৩৯টি শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে ২৩ কোটি ৮৫ লাখ ৯ হাজার টাকায়।
আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএই) গতকাল সবগুলো সূচকই পয়েন্ট হারিয়েছে। সিএএসপিআই ২৮.১০ পয়েন্ট কমে এখন ১৫ হাজার পয়েন্টের নিচে চলে এসেছে। সিএসসিএক্স ১৯.৭৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৯ হাজার পয়েন্টের নিচে এবং সিএসই-৩০ সূচক ১০.৫৩ পয়েন্ট কমে সাড়ে ১১ হাজার পয়েন্টে নেমেছে। এ দিন ৮০ লাখ ৯৩ হাজার ৮০৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড লেনদেন হয়েছে ১৫৯ কোটি ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭০৯ টাকায়। আগের দিন মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড। ফলে লেনদেন টাকায় বেড়েছে ৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সিএসইতে ২২৯টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ১৩৯টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টি প্রতিষ্ঠানের।
বাজারবিশ্লেষক রয়েল ক্যাপিটাল বলছে, শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক (ডিএসইএক্স) দুই দিন ইতিবাচক থাকার পর দিনশেষে গতকাল নেতিবাচক ধারায় শেষ হয়েছে। প্রধান সূচক ২৩ পয়েন্ট হারিয়েছে। সেই সাথে সূচক দীর্ঘদিন যাবত ৫ হাজার ২২০ পয়েন্টে টেকনিক্যাল সাপোর্ট নেয়ার চেষ্টা করছে। অল্প মুনাফা হলেও শেয়ার বিক্রি করে তা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। লেনদেনের পরিমাণ মঙ্গলবারের তুলনায় ৩৫.৭ শতাংশ বা ২১২ কোটি টাকা কমেছে। ঢাকার শেয়ারবাজারে সূচক নিম্নমুখী ছিল এবং মূলধন গত দিনের তুলনায় ০.৫১ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে, ভলিউম ৪৪ শতাংশ এবং টার্নওভার ৩৬ শতাংশ কমেছে। ১৯টি সেক্টরের মধ্যে ৩টি সেক্টরের বাজার মূলধন বেড়েছে এবং ১৬ টি সেক্টরের বাজার মূলধন কমেছে।