১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

চার কারণে পতনের জালে আটকে গেছে পুঁজিবাজার

-

- দুই দিনে ডিএসই হারিয়েছে ১৩৯ পয়েন্ট
- ডিএসইর মূলধন ০.২৪ শতাংশ তারল্য উধাও
- দাম কমার সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেয়া প্রত্যাহার করা উচিত

টানা দরপতনের জালে আটকে গেছে পুঁজিবাজার। বের হতে পারছে না পতনের কবল থেকে। রিজার্ভ কমে যাওয়া ও রিজার্ভ চুরি হওয়ার গুঞ্জন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপের গুঞ্জন এবং দাম কমার সর্বোচ্চসীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেয়াকে ধারাবাহিক পতনের কারণ বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষক ও বিভিন্ন ব্রোকার হাউজের সংশ্লিষ্টরা। শুধু গত দ্ইু দিনে ডিএসইর মূল সূচক থেকে ১৩৯ পয়েন্ট ঝরে গেছে। আর সিএসইর মূল সূচক থেকে ঝরেছে পৌনে ৩০০ পয়েন্টেরও বেশি। ৭৬.২০ শতাংশ কোম্পানি দরপতনের শিকার। মূলধন কমেছে ০.২৪ শতাংশ।
ব্যক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা স্বাভাবিক লেনদেন করতে চাই। কিন্তু দাম কমার সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেয়ার কারণে স্বাভাবিক লেনদেন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী টাকা আটকে যেতে পারে, এমন শঙ্কায় শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছেন। আর বিক্রির চাপ বাড়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
দিনের লেনদেনের তথ্য থেকে বাজারবিশ্লেষণে দেখা যায়, লেনদেন শুরুর কিছু সময় পরই সূচক হারাতে শুরু করে পুঁজিবাজার। অনুসরণ করে পতনের পথ। অব্যাহতভাবে পয়েন্ট হারানোর পরিমাণ বাড়তে থাকে। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর বেশির ভাগই দর পতনের জালে আটকে যায়। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আরো ৫৮.২২ পয়েন্ট হারায়। শরিয়াহ সূচক আরো ১২.৭৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪.১৪ পয়েন্ট হারায়। লেনদেনে অংশ নেয়া ডিএসইর ৩৯৫টি কোম্পানির মধ্যে দর পতনের শিকার ৩০১টি, দর বৃদ্ধি পায় ৬১টির এবং দর অপরিবর্তিত থাকে ৩৩টি কোম্পানির।
বিক্রি কমে যায় আগের দিনের তুলনায়। পনের কোটি ৯২ লাখ ২৬ হাজার ৯১৯টি শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড হাতবদল হয়েছে ৫২৩ কোটি ৩৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৭ টাকা বাজারমূল্যে। মঙ্গলবার লেনদেন হয় ৬৬৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। ফলে লেনদেন কমেছে ১৩৮ কোটি টাকার বেশি। ডিএসইতে ৩৭টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩টির, কমেছে ১৪টির এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ১০টির।
এ দিকে ডিএসইর ব্লক মার্কেটে ৪৫টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির ৬৮ লাখ ৩১ হাজার ৯১টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড মোট ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ১৫ হাজার টাকায় হাতবদল হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ স্টিল, রিলায়ান্স ওয়ান দ্যা ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়ান্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড, সোনালি পেপার, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড- এই পাঁচ কোম্পানির। এই পাঁচ কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৪২ লাখ টাকারও বেশি।
ডিএসইর তথ্য বলছে, কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ স্টিলের। এ দিন কোম্পানিটির ৫ কোটি ৪৫ লাখ ৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আর রিলায়ান্স ওয়ান দ্য ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়ান্স ইন্স্যুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ডের ৩ কোটি ৭৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকার ইউনিট লেনদেন হয়েছে। ৩ কোটি ৫১ লাখ ৯৪ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন করে সোনালি পেপার। এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্টকে সব সূচকই গতকাল উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। প্রধান সূচক ২৭৫ পয়েন্ট হারিয়েছে গত দু’দিনে। সিএএসপিআই ১০৪.৫৬ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স ৬৫.০২ পয়েন্ট এবং সিএসই-৩০ সূচক ৮০.৪৪ পয়েন্ট হারিয়েছে। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৩৪টি কোম্পানির মধ্যে দর পতনের শিকার ১৭৪টি, দর বৃদ্ধিতে ৩২টি এবং দর অপরিবর্তিত ছিল ২৮টি। ৩৫ লাখ ২২ হাজার ৩৬৪টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বেচাকেনা হয়েছে ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮৭ হাজার ২২ টাকায়।
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যালোচক রয়েল ক্যাপিটাল বলছে, আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২১ শতাংশ। আর শেয়ার বিক্রি কমেছে ২০ শতাংশ। ১৯টি খাতের মধ্যে ১৭টি খাতই লোকসানের মুখে। মাত্র দু’টি খাত মুনাফা করেছে। ডিএসইতে ০.২৪ শতাংশ তারল্য কমেছে।


আরো সংবাদ



premium cement