১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


সাপ্তাহিক পর্যালোচনা

সপ্তাহজুড়ে ইতিবাচক ধারায় উভয় পুঁজিবাজার

-

বিদায়ী সপ্তাহে অর্থাৎ (২৮ এপ্রিল থেকে ০২ মে) মোট চার কার্যদিবসে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে সব মূল্য সূচকের উত্থান হয়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে ১ মে শ্রমিক দিবস হওয়ায় এক দিন শেয়ার বাজার বন্ধ ছিল। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই সূচকের উত্থান ঘটেছে। সপ্তাহ শেষে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জেই সূচকের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেন ও বাজার মূলধনের পরিমাণ। আলোচ্যে সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি এবং লেনদেন বেড়েছে ৫৮ কোটি টাকা।
সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৭.১৭ পয়েন্ট বা ১.৭৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬১৫.৬৫ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৫.১৬ পয়েন্ট বা ১.২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৩২.৪৩ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচক ৩৩.৩৫ পয়েন্ট বা ১.৬৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭.৮৬ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসএমইএক্স সূচক ৫.৭৯ পয়েন্ট বা ১.৫৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৯৯.৫৮ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহে গড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৩৮টি, কমেছে ১৩৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই’তে মোট ৭৭ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৯১০ বার হাতবদল হয়। টাকার অঙ্কে যার বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৩ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৭৬৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৫৮ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা ২.১২ শতাংশ।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৫৬১ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে সাত লাখ পাঁচ হাজার ৫৭৯ কোটি ছয় লাখ ৩০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ছয় হাজার ৭৬৪ কোটি এক লাখ ১০ হাজার টাকা বা ০.৮৯ শতাংশ।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৩৫.৬৪ পয়েন্ট বা ১.৪৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫১.৩৯ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ১৪২.৫৭ পয়েন্ট বা ১.৪৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৬৪.৪৯ পয়েন্টে। অপর দু’টি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১৫.৩৩ পয়েন্ট বা ১.৩৭ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ১৬.৩২ পয়েন্ট বা ১.৫৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- এক হাজার ১৩৭.৯৮ পয়েন্টে এবং এক হাজার ৫৬.৫৯ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই-৩০ সূচক ২৪০.৭৫ পয়েন্ট বা ১.৯৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৫৯.৫৫ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৬টির, কমেছে ১৩৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির।
সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ১৮৩ কোটি ৬৭ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪৫ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮১ কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৭ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন ১০২ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার ৪৫৭ টাকা বা ১২৫.১৬ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে দরপতনের তালিকায় ‘এ’ ক্যাটাগরি কোম্পানির আধ্যিকতা দেখা গিয়েছে। তাতে সপ্তাহ শেষে দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে রূপালী ব্যাংক পিএলসি।
ডিএসইতে বেড়েছে পিই রেশিও : সপ্তাহের ব্যবধানে অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল থেকে ২ মে, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বেড়েছে। তথ্যমতে, আলোচ্য সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ছিল ১০.৩১ পয়েন্টে। যা সপ্তাহ শেষে অবস্থান করছে ১০.৯৯ পয়েন্টে। উল্লেখ্য, সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে ০.৬৮ পয়েন্ট বা ৬.৫৯ শতাংশ।
ডিভিডেন্ড ঘোষণা : এবি ব্যাংক ২ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ও ২.৫০ শতাংশ স্টকসহ মোট ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।
এসবিএসি ব্যাংক ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এনসিসি ব্যাংক ১২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এনআরবিসি ব্যাংক ১১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। সাউথইস্ট ব্যাংক ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর ৬ শতাংশ ক্যাশ এবং ৪ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। যমুনা ব্যাংক ২৬ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৭.৫০ শতাংশ ক্যাশ ও ৮.৫০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। এনআরবি ব্যাংক ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আর উদ্যোক্তা পরিচালকদের জন্য ৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক ১২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ট্রাস্ট ব্যাংক ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১২ শতাংশ ক্যাশ এবং ৮ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। মিডল্যান্ড ব্যাংক ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ঢাকা ব্যাংক ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এনআরবি ব্যাংক ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এখান থেকে উদ্যোক্তা পরিচালকরা পাবে ৬ শতাংশ। ব্যাংক এশিয়া ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।
ইন্স্যুরেন্স খাতের কোম্পানির মধ্যে মার্কেন্টাইল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। রূপালী ইন্স্যুরেন্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স ৭ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।
পিপলস ইন্স্যুরেন্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স ১১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড। কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। প্রগতি ইন্স্যুরেন্স ২৭ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ ক্যাশ এবং ৭ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড।
পুঁজিবাজার থেকে ১২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে ই-ইঞ্জিনিয়ারিং : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী প্রকৌশল খাতের কোম্পানি ই-ইঞ্জিনিয়ারিং পিএলসি। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্র্রহ করতে চায় কোম্পানিটি। সম্প্রতি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজার থেকে ১২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। আর সংগ্রহ করা অর্থ দিয়ে অটোক্লে¬ভ প্যানেলস, কনক্রিট ব্লক, ইট ও টাইলস উৎপাদনের একটি প্ল্যান্ট স্থাপন করবে কোম্পানিটি।
উল্লেখ্য, ই-ইঞ্জিনিয়ারিং পিএলসি হচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক পরিবারের একটি কোম্পানি। পুঁজিবাজারে এলে এটি হবে এই গ্রুপের দ্বিতীয় কোম্পানি।
৬৭৯ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করবে রূপালী ব্যাংক : ৬৭৯ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেয়ারবাজারে ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রূপালী ব্যাংক পিএলসি। এ জন্য ব্যাংকটি ৬৭৯ কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকার সাধারণ শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেয়ারহোল্ডার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনসাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, সরকারি ইক্যুইটির বিপরীতে রূপালী ব্যাংক ৪৫ কোটি ৩৩ লাখ ৩০ হাজার ২৫৩টি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি শেয়ারের দাম হবে ৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ১৫ টাকা। ফলে আলোচ্য শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে রূপালী ব্যাংক পুঁজিবাজার থেকে ৬৭৯ কোটি ৯৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকা উত্তোলন করবে।
এ দিকে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২৩ অর্থবছরের জন্য কোনো ডিভিডেন্ডের সুপারিশ করেনি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। আলোচ্য অর্থবছরে ব্যাংকটির সমন্বিত ইপিএস হয়েছে এক টাকা ৩৫ পয়সা। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৬১ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ শেষে ব্যাংকটির সমন্বিত এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৩৬ টাকা ৯০ পয়সায়।


আরো সংবাদ



premium cement