আমতলীতে সেতু ভেঙে নিহত ৯ জনের পরিচয় মিলেছে
- মো: জয়নুল আবেদীন, আমতলী (বরগুনা)
- ২২ জুন ২০২৪, ১৯:২১, আপডেট: ২২ জুন ২০২৪, ২০:১৩
বরগুনার আমতলী উপজেলায় চাওড়া নদীর উপর নির্মিত হলদিয়া হাট সেতু ভেঙে বিয়ের ৯ কনেযাত্রী নিহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে এক পরিবারের তিনজন। অপর নিহতরা সকলেই পরস্পর আত্মীয়-স্বজন।
শনিবার (২২ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এদিকে, অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদার দায়সারা সেতু নির্মাণ করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঠিকাদারের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।
কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমির সহকারী শিক্ষক উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ মনিরের মেয়ে হুমায়রা আক্তারের সাথে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমতলী পৌর শহরের খোন্তাকাটা এলাকার বাসিন্দা সেলিম মাহমুদের ছেলে ডা: সোহাগের বিয়ে হয়। গত শুক্রবার ওই কনেকে বরের বাড়িতে তুলে আনেন। আজ শনিবার মেয়ের পক্ষের লোকজন বরের বাড়িতে মাইক্রোবাস এবং অটোরিকশায় করে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হলদিয়া সেতু পার হওয়ার সময় সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে যায়। এতে গাড়ি দুটি নদীতে পড়ে যায়। অটোরিকশায় থাকা যাত্রীরা সবাই সাঁতরে কিনারে উঠতে পারলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা নদীতে তলিয়ে যায়।
তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা ওই মাইক্রোতে থাকা লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন ও নাশির উদ্দিন নামে অপর এক ব্যক্তি।
খবর পেয়ে আমতলী ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে মাইক্রোবাসে থাকা কনেপক্ষের ৯ যাত্রীর মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- রুবিয়া (৪৫), রাইতি (২২), ফাতেমা (৫৫), জাকিয়া (৩৫), রুকাইয়াত ইসলাম (৪), তাহিয়া মেহজাবিন আজাদ (৭), তাসফিয়া (১৪), ঋধি (৪) ও রুবি বেগম (৩৫)।
এদের মধ্যে রুকাইয়াত ইসলাম ও জাকিয়ার বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামে। অপর নিহত সাতজনের বাড়ি মাদারিপুর জেলার শিবচর উপজেলার কোকরার চর গ্রামে। তারা কনে হুমায়রার মামার বাড়ির আত্মীয়-স্বজন। নিহতদের লাশ আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।
খবর পেয়ে বরগুনা-১ আসনের সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু, জেলা প্রশাসক মোহা: রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার ফোরকান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান, সহকারী পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মাইক্রোবাসে থাকা সোহেল মিয়া বলেন, ‘মাইক্রোবাসে কনেপক্ষের ১৬ জন যাত্রী বরের বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে হলদিয়া হাট সেতুতে উঠামাত্রই সেতুটি মাঝখান দিয়ে ভেঙে মাইক্রোবাসটি নদীতে পড়ে যায়। আমিসহ তিনজন সাঁতরে কিনারে উঠতে পেরেছি। পরে স্থানীয়রা, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে।’
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ‘সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস নদীতে ডুবে গিয়ে বিয়ের কনেপক্ষের ৯ জন মারা গেছে। নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’
আমতলী ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার ইনচার্জ মো: হানিফ বলেন, ‘চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে মাইক্রোবাস উদ্ধার করতে পারিনি। উদ্ধার চেষ্টা অব্যহত আছে।’
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মো: মনিরুজ্জামান বলেন, ওই ৯ জন হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) তারেক হাসান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উদ্ধার কাজের তদারকি করছি।
তিনজন নিহত হওয়া পরিবারের প্রধান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার কিছুই রইল না। আমার দুই কন্যা ও স্ত্রী মারা গেছে। সব হারিয়ে আমি এখন অসহায়।’
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক বলেন, ‘সেতু নির্মাণকালে ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা দায়সারা নির্মাণকাজ করেছে। ফলে নির্মাণের অল্প দিনের মধ্যেই সেতুর মাখঝানের ভিম ভেঙে গেছে। ওই ভাঙ্গা সেতু দিয়ে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ চলাচল করতো।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ভাঙ্গা সেতু মেরামতের জন্য আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বহুবার জানিয়েছি কিন্তু তিনি আমলে নেয়নি। যার ফলে আজ ৯ জনের প্রাণ গেল। ঠিকাদার দায়সারা সেতু নির্মাণ করায় এবং উপজেলা প্রকৌশলী সেতু সংস্কার না করায় তাদের শাস্তি দাবি করছি।’
ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘আমি যথাযথভাবেই সেতু নির্মাণ করেছি। সেতু নির্মাণ কাজে কোনো অনিয়ম করিনি।’
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমতলীতে আমার যোগদানের আগে এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা: রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ সেতু নির্মাণে যে ঠিকাদার অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বরগুনা-১ আসনের সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, ‘নিহতের স্বজনদের হাসপাতালে সমবেদনা জানিয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থলে বিক্ষুদ্ধ মানুষকে শান্ত করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেতু নির্মাণে অনিয়মের কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।’
জানা গেছে, আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী অধিদফতর ২০০৮-০৯ অর্ধবছরে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলার চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত চাওড়া নদীর উপর হলদিয়া হাট এলাকায় আয়রণ ব্রীজ নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। ওই সেতুর নির্মাণকাজ পায় তৎকালীন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম মৃধা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা