১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে দায়িত্ব পালন করতে হবে : মিয়া গোলাম পরোয়ার

বক্তব্য রাখছেন মিয়া গোলাম পরোয়ার - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমার মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন, আমার সবকিছু শুনছেন। আমরা যা কিছু করছি সবকিছুই তিনিই পর্যবেক্ষণ করছেন।’

শুক্রবার বরিশাল অঞ্চলের জেলা ও মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষা শিবিরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সুতরাং আমাদের সকল কর্মতৎপরতা যেন হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আর এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই যেন আমরা জান্নাতে পৌঁছে যেতে পারি।

মিয়া গোলাম পরোয়ার ‘সংগঠন পরিচালনায় জেলা/ মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি বলেন, এক্বামতে দ্বীনের আন্দোলন ফরজ। আম্বিয়া কেরামদেরকে পাঠানো হয়েছে মানুষকে হেদায়েতের জন্য। আর এজন্যই আম্বিয়া কেরামের ওপরে কিতাব নাজিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রশক্তি হাতে থাকলে এই কিতাব দিয়ে মানবজাতিকে কল্যাণের পথে পরিচালনা করা যায়। আল্লাহ তাআলা কোরআনের বিভিন্ন স্থানে এক্বামতে দ্বীনের কাজের পুরস্কার এবং না করার পরিণতি সম্পর্কে বলেছেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা কি হাজিদের পানি পান করানো আর মসজিদে হারামের খেদমতকে জিহাদের সাথে সমতুল্য মনে কর?

গোলাম পরোয়ার গঠনতন্ত্রের ধারা ৪৩-এর ৬ উপ-ধারায় কর্মপরিষদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে দেন। তিনি বলেন, কর্মপরিষদ সংগঠনের কোনো অলংকারীক অঙ্গ নয়। এটি একটি কাজের ফোরাম।

তিনি বলেন, কর্মপরিষদ কোনো মর্যাদাপূর্ণ পদের নাম নয়। কর্মপরিষদ সদস্যরা কেন্দ্রের এবং জেলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টির চেষ্টা করবেন।

তিনি বলেন, কর্মপরিষদ সদস্যদের এক একজনের ওপর এক একটি বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি যদি তার দায়িত্বে গাফিলতি করেন, তাহলে সেই বিভাগের কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। তিনি টিম স্পিরিটকে ফুটবল খেলার সাথে তুলনা করেন। ফুটবলে ১১ জন প্লেয়ার যেভাবে গোলের লক্ষ্যে একযোগে যার যার দায়িত্ব পালন করে, কর্ম পরিষদের প্রত্যেক দায়িত্বশীল যদি স্ব স্ব স্থানে নিজের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেন তাহলে টিম স্পিরিট গড়ে ওঠে। টিম স্পিড না থাকলে সংগঠনের কাজ সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়।

সংগঠন পরিচালনায় কর্মপরিষদ সদস্যদের দায়িত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, কর্মপরিষদ সদস্যদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে পরিকল্পনা করা, কর্মবণ্টন করা এবং তত্ত্বাবধান করা। কর্মপরিষদের সদস্যরা কিভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন, কিভাবে কর্ম বণ্টন করে দেবেন এবং তত্ত্বাবধান করবেন সেসব বিষয়গুলোকে সবিস্তারে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, শুধু দায়িত্ব বণ্টন করে দিলেই হবে না, যথাযথভাবে দায়িত্ব আদায় করার জন্য তত্ত্বাবধান করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের কর্মপরিষদ সদস্য ভাইদের ৩টি যোগ্যতার চাহিদা পূরণ করতে হবে। সাংগঠনিক যোগ্যতার চাহিদা, রাজনৈতিক যোগ্যতার চাহিদা, দ্বীনী যোগ্যতার চাহিদা পূরণ। পরিকল্পনা ক্ষেত্রে ভূমিকা, জনশক্তির মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা, ইউনিট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা, বাইতুল মাল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা।

গোলাম পরোয়ার বলেন, জনশক্তিকে পাশে রেখে কাজ শেখাতে হবে। আগামী দিনের দক্ষ যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হলে তাদেরকে সাথে রেখে রেখে কাজ শেখাতে হবে।

তিনি বলেন, দায়িত্বশীল যদি জনশক্তিকে কোনো পরামর্শ বা আবেদন করেন, আর জনশক্তি যদি সেটাকে নির্দেশ মনে না করে, আর দায়িত্বশীলকে বাধ্য হয়ে তাকে হুকুম দিয়ে কাজ করাতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে সেখানে সাংগঠনিক চেতনার অভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, তিনি হলেন যোগ্য দায়িত্বশীল, যিনি সাংগঠনিক চেতনাসম্পন্ন কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে পারবেন।

তিনি উপস্থিত কর্মপরিষদ সদস্যদেরকে অনুরোধ করেন, তারা যেন আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি বলেন, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমরা যা করছি আল্লাহ সব দেখছেন, শুনছেন। সুতরাং আমাদের সকল কর্মতৎপরতা যেন হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আর এর মাধ্যমে যেন আমাদেরকে জান্নাতে পৌঁছে দিতে পারে। বক্তব্যের শেষে তিনি উপস্থিত কর্মপরিষদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেন।

শুক্রবার সকাল ৯টায় কেন্দ্রীয় এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল অঞ্চল পরিচালক অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলালের সভাপতিত্বে এবং তার উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষা শিবির শুরু হয়। অনুষ্ঠানের দারসুল কোরআন পেশ করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন কেন্দ্রীয় শূরা ও বরিশাল অঞ্চল টীম সদস্য মাওলানা ফখরুদ্দিন খান রাযী। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও বরিশাল মহানগরী আমীর মাওলানা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, অঞ্চল টিমের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, সকল জেলা আমির প্রমুখ।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম সূরা ক্বফের ৩০-৩৬ হায়াতের দারস পেশ করেন। তিনি বলেন, জামায়াত নৈতিকতার প্রশ্নে কখনো কোনো ছাড় দেয় না। কারণ, আমরা আজাবুল আজিম এবং আজাবুন আলিম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আন্দোলনে শামিল হয়েছি। তিনি কর্ম পরিষদ সদস্যদের সামনে কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গা থেকে জাহান্নামের ভয়াবহতা এবং জান্নাতের পুরস্কার সম্পর্কে তুলে ধরেন।

এরপর মাওলানা আব্দুল হালিম ‘যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের ত্যাগ ও কোরবানি’ শীর্ষক এক আলোচনা পেশ করেন। আলোচনায় তিনি বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জামাত নেতৃবৃন্দের ত্যাগ ও কোরবানি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এ সময় আমাদের লক্ষাধিক গ্রেফতার, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী রাহ:-কে ৪৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে একটা বিবৃতি দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী জেলে বসে তার মাকে হারিয়েছেন, প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছেন, ভাইকে হারিয়েছেন, পুত্রবধূ হারিয়েছেন তবুও কোনো কিছুই তাকে আদর্শচ্যুত পারিনি। তারা আমাদের সামনে ত্যাগ কোরবানির উৎকৃষ্ট উদাহরণ পেশ করে গেছেন।

তিনি বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন আলোড়ন সৃষ্টিকারী দুটি সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমীন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের ত্যাগ কোরবানির বিভিন্ন ঘটনা উদ্ধৃত করেন।

অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, আম্বিয়া কেমের দাওয়াতে যারা সাড়া দিয়েছিলেন, তারাও মানুষ ছিলেন, তারা আসমান থেকে নাজিল হননি। নবী সাঃ মানুষের কাছে কেমন প্রিয় ছিলেন, সে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পালক পুত্র জায়েদ অনেক বছর পরে পিতামাতাকে পেয়েও হযরত মুহাম্মদ সাঃ-কে ছেড়ে যাননি। তাঁর কাছেই থেকে যান। এটা ঘটনা যখন ঘটে তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু ইসলাম নবুয়ত পাননি। রাসূল সাঃ প্রত্যেক নবী-রাসূল সামাজিক এবং মানবিক দায়িত্বশীল ছিলেন।

তিনি কোরআনের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে রাসূল সাঃ কিভাবে কোরআনের নির্দেশনায় সমাজকে ইসলামী আদর্শের আলোকে নির্মাণ করেছিলেন তা তুলে ধরেন। তিনি সূরা মাউনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নামাজ না পড়লে যেভাবে জাহান্নামে যেতে হবে ঠিক সেভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন না করলেও জাহান্নামে যেতে হবে। রাসূল সাঃ তার সাহাবীদেরকেও এভাবে সামাজিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষে পরিণত করেছে। তিনি সূরা বাকারা থেকে আটটি সামাজিক কাজের উদাহরণ পেশ করেন।

শিক্ষা শিবিরে পিরোজপুর সাংস্কৃতি কেন্দ্রের শিল্পীরা ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
সিরিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে রাশিয়া, সামরিক ঘাঁটির নিরাপত্তার ওপর জোর গাজীপুর ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের চাপায় অটোরিকশার ৪ যাত্রী নিহত আরেক মামলায় খালাস পেলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন রাশিয়া আবারো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে 'ওরেশনিক ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে : যুক্তরাষ্ট্র অভয়নগরে ট্রাকচাপায় নিহত ২, ট্রাকে আগুন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের আগেই নিরাপত্তা স্মারক বাইডেনের মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় শ্রীমঙ্গলে বেড়েছে শীতের প্রকোপ উত্তরাঞ্চলজুড়ে তীব্র ঠান্ডা বিস্ফোরণে আফগান মন্ত্রী নিহত : আইএসের দায় স্বীকার

সকল