১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শিল্পী বাবুই পাখি আজ মুলাদীতে বিলুপ্তির পথে

- ছবি : নয়া দিগন্ত

কবি রজনীকান্ত সেন তার কবিতায় লিখেছিলেন ‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, কুড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টলিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোধ, বৃষ্টির, ঝড়ে।’ বাবুই হাসিয়া কহে ‘সন্দেহ কি তাই? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায় পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।’

তবে, সময়ের সাথে সাথে বিলুপ্তির পথে সেই প্রতিভাবান ও শিল্পী পাখি বাবুই পাখি এবং তাদের বাসা।

এক সময় গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে তালগাছের ডগায় ডগায় বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা চোখে পড়ত। দল বেধে উড়ন্ত বাবুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত ছিল গ্রাম বাংলার জনপদ।

বিলুপ্ত প্রায় এই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা হঠাৎ চোখে পরে মুলাদী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লা বাজার রাস্তায় মাথায় তাল গাছে।

বাবুই পাখির বাসা তৈরির পছন্দের শীর্ষে তাল গাছ, খেজুর গাছ ও নারিকেল গাছসহ উঁচু প্রজাতির বিভিন্ন গাছ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য পরিবর্তনের পাশাপাশি এ ধরনের গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কমে আসছে বাবুই পাখির সংখ্যা। এতে ধীরে ধীরে বাবুই পাখির নান্দনিক বাসা দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।

বাবুই পাখি তিন ধরনের (দেশী বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই) হয়ে থাকে। তবে, বাংলা ও দাগি বাবুই এখন বিলুপ্তির পথে। বাবুই পাখির বাসা দেখতে অনেকটা উল্টানো কলসির মতো। এরা খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবন দিয়ে বাসা বাধে। বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত। বাসা তৈরির সময় দু’টি নিম্নমুখী গর্ত রাখে। অর্ধেক বাসা বাঁধার পর তার সঙ্গীকে খোঁজে। স্ত্রী বাবুইটির পছন্দ হলে মাত্র চার দিনে বাসা বাধার কাজ শেষ করে। বাসার নিম্নমুখী একটি গর্ত বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা করে। অন্যটি খোলা রাখে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য। বাসার ভেতরে-বাহিরে কাদা লাগিয়ে রাখে। ফলে ঝড়ে বা বাতাসেও টিকে থাকে বাসা। কথিত আছে, রাতে বাসা আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে এনে রাখে। সাধারণত মে থেকে আগস্ট বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম। একটি পুরুষ পাখির একাধিক বাসা ও পরিবার থাকতে পারে। বাবুই পাখি দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চা উড়ে যায়। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। তাই এদের ঠোঁটের আকৃতি সহজে বীজ ভক্ষণের উপযোগী চোঙাকার। এরা সাধারণত খুঁটে খুঁটে বিভিন্ন ধরনের বীজ, ধান, ভাত, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু-রেণু ইত্যাদি খেয়ে জীবন ধারণ করে।

সরেজমিনে, এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়া ও আনিচুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ‘আগে বাবুই পাখিসহ অনেক পাখির মনোমুগ্ধকর শব্দে সকালের ঘুম ভাঙত। অনেক জায়গায় বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত, যা দেখতে অনেক ভালো লাগতো। বর্তমানে বাবুই পাখির বাসা চোখে তেমন পড়ে না।’

মুলাদী সরকারি কলেজের জীববিজ্ঞানের প্রভাষক ও পাখি প্রেমিক খান মো: দিদার হোসেন জানান, ‘বাবুই পাখি নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করে। তাদের আবাসস্থল ও খাবারের অভাবে তাদের সংখ্যা কমে আসছে। বাবুইসহ অন্য পাখিদের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল সৃষ্টি হলে অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। সাধারণ মানুষেরা বাবুই পখির বাসার মতো অন্য পাখিদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।’

মুলাদী উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাবুই পাখিকে মূলত শিল্পী পাখি বলা হয়। প্রয়োজনীয় খাবার ও আবাসস্থল কমে যাওয়ায় দিন দিন পাখিটি সংখ্যা কমে আসছে। পাখির বিলুপ্তি রোধে প্রত্যেকের সচেতন হওয়া উচিত।’


আরো সংবাদ



premium cement