রেমালে লন্ডভন্ড শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খোলা আকাশের নিচেই চলছে পাঠদান
- কামরুজ্জামান, চরফ্যাসন (ভোলা)
- ০৩ জুন ২০২৪, ১৫:০৯
চরফ্যাশনে রেমালের আঘাতে স্কুল-মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের মিনাবাজারের কাছে অবস্থিত‘মিনাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়' ও দক্ষিণ আইছা থানায় অবস্থিত ঢালচর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা চরকল ইউনিয়নে অবস্থিত চরকর্মী ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসাটি রিমেলের আঘাতে ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায়।
সংশ্লিষ্ট স্কুল ও মাদরাসার এমন কোনো ভবন নেই যেখানে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করবে। এ সকল স্কুল-মাদরাসাগুলো এলাকার হাজারো শিক্ষার্থীকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়তে কাজ করেছে।
সোমবার (২৭ মে) প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় রেমাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘরে আঘাত হানে, মুহুর্তেই স্কুল ও মাদরাসা টিনশেড ঘড়গুলো দুমড়েমুচড়ে মাটির সাথে মিশে যায়। রিমেলের প্রভাব শেষে খোলার দিনে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে এসে দেখে ঘুর্ণিঝড়ের আগে রেখে যাওয়া তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান আর আগের মতো নেই। চেনা শ্রেণী কক্ষগুলো আর নেই, নেই ঝুলে থাকা ব্লাকবোর্ডগুলো, তাদের বসার সারিসারি বেঞ্চগুলো চাপা পড়ে আছে ভেঙে চুরমার হওয়া টিনের চাল ও বেড়ার নিচে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাধ্য হয়ে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও গত এক সপ্তাহ যাবত খোলা আকাশের নিচে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। ক্লাসের সময় বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষকসহ সবাই আশ্রয় নেন পাশের বাড়ির কাচারীতে থাকা। কখনো তীব্র রোদ কখনো ঝড়ো বৃষ্টি এরই মধ্যেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে চলছে ক্লাস।
এ সকল প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শিক্ষকরা জানান, পুরো মেঝেতে টিন ও কাঠের গুড়ি পড়ে থাকায় মেঝের ছোট অংশে খোলা আকাশের নিচে কখনো দুই, কখনো তিন ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একত্রে পাঠদান করতে হচ্ছে।
তারা আরো জানান, এভাবে চললে শিক্ষার্থীরা পাঠের প্রতি তাদের মনোযোগ হারিয়ে ফেলবে। ইতোমধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে পুড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থতা বোধ করছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের আগের দিন যথারীতি ক্লাস নিয়ে বাসায় ফিরে আসি, পরের দিন ফিরে দেখি ঝড়ে আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। কোনো উপায় না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরিন হক জানান, আমাদের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ আবেদন করেছেন আমরা ওই আবেদন মন্ত্রণালয় প্রেরণ করেছি, আশা করছি অতি দ্রুত মন্ত্রণালয় এই প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য থোক বরাদ্দ প্রদান করবেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মহিউদ্দিন জানান, রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করছি অতি দ্রুত সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যাপারে এখন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করানো ছাড়া কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগী না হলে তাদের বৎসরের যে পাঠ পরিকল্পনা তা শেষ করা সম্ভব হবে না।
ঢালচর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মো: আমির হোসেন জানান, ঘটে যাওয়া রেমালের আঘাতে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। তারপরও আমরা খোলা আকাশের নিচে আমাদের ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের নির্ধারিত সিলেবাস মোতাবেক এ বছরের পাঠ পরিকল্পনা শেষ করার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অতি দ্রুত মাদরাসাটি মেরামতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দর আশা করছি।
মিরা বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম জানান, ঘটে যাওয়া রেমালের আঘাতে আমার বিদ্যালয়টি একেবারে তছনছ হয়ে যায়। আমিও এখন খোলা আকাশের নিচে ক্লাস পরিচালনা করছি। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী অতি শিগগির আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতের জন্য বরাদ্দ প্রদান করিবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা