১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড উপকূল উপজেলা কাউখালী

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড উপকূল উপজেলা কাউখালী - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঘূর্ণিঝড় রেমালে লণ্ডভণ্ড হয়েছে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের কাউখালী। ঘূর্ণিঝড়েরর শুরু থেকে টানা দুই দিন ঘুমহীন রাত কেটেছে উপকূলের বাসিন্দাদের।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার রাতে উপকূলে আঘাত হানে। রোববার বিকেল থেকে একটানা ২০ ঘণ্টা রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে রাত ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল ও বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করে।

এর প্রভাবে উপকূলের জেলা পিরোজপুরে কাউখালী উপজেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এতে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। ফলে উকূলীয় এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে, গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্লাবিত হয়ে গেছে। এখন উপকূলের মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে।

ভারি বর্ষণ ও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়িতে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল বসতবাড়ির ইলেকট্রনিক্স আসবারপত্র। ফসলের ক্ষেত, উপড়ে গেছে বহু গাছ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রোববার দুপুর ভেঙে উপজেলার সকল গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলায় প্রায় পাচ শতাধিক কাঁচা-পাকাবাড়ি ঘর বিধ্বস্তসহ। উপড়ে পড়া গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি।

কাউখালীর শহর থেকে গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই যে নিচতলা পানিতে ডুবেনি। গ্রামগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। এ রকম পানি এর আগে কেউ দেখেনি। মোবাইলের নেটওয়ার্ক নেই।

কাউখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইনচার্জ মো: শহিদুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুতের লাইনে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কবে বিদ্যুৎ সবখানে চালু হবে তার নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তারা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোসহ বিভিন্নভাবে মানুষের পাসে থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

গভীর নলকূপ বিভিন্ন জায়গায় পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ও বৃষ্টির কারণে বহু জায়গায় গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন রাস্তার উপড়ে পরে থাকা গাছগুলো অপসারণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা করে দিয়েছে। উপজেলার হাজারো ব্যবসায়ীর দোকানে পানি ঢুকে কোটি কোটি টাকার তাদের মালামাল নষ্ট হয়েছে। এছাড়া হাজারো মানুষের বসতবাড়িতে পানি ডুকে তাদের আসবাবপত্র ইলেকট্রনিক্স জিনিস নষ্ট হয়েছে।

সিনিয়র সাংবাদিক রিয়াদ বলেন, ইতিহাসে এত বড় দুর্যোগে কাউখালীতে যে কত কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তা হিসেব করা কষ্টসাধ্য।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, এলাকার মৎস্য খামারের অন্তত ৪০টি মাছের ঘের, ২৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা দাস বলেন, ইরি ধানের ফসল প্রায় চার-পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ বিভিন্ন ইউনিয়নেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪৫টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রসহ বহুতল ভবনে ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে দেখা যায়। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন দুর্যোগকবলিত মানুষের ভিড় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে খাবার রান্না করে সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেক পরিবার নিজের বসতি ফেলে গ্রামের পাকা কোনো বাড়িতেও আশ্রয়ের জন্য নিয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল থেকে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হলে নদী তীরের মানুষ আতঙ্কে পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন শেল্টারে সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় করে। এ সময় নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়ে এতে গ্রামের কয়েক হাজার কাঁচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জোয়রের পানি পাকা সড়ক উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় বেশ কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার শহরের ভেতরের চার থেকে পাঁচ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়।

উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাজারো কৃষক ও মৎস্য খামারি রিমালে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এতে অন্তত এক হাজার হেক্টর জমির ফসল জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে। এর মধ্যে আউশ বিজতলাসহ, পান, সুপারি ফল ও শাকসবজি ক্ষেতসহ ৩০০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কৃষি দফতরের হিসেব অনুযায়ী সর্বমোট চার-পাঁচ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষকের কাছে এর ক্ষতির পরিমাণ দ্বিগুনেরও বেশি।

কাউখালী ইউএনও সজল মোল্লা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ঘর, ব্যবসায়ীদের রবিশস্য, সড়ক, বিদ্যুৎ ও বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া মনু বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবার আশ্বাস দেন।


আরো সংবাদ



premium cement