১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


মা সুস্থ, ছেলে এখন করোনা পজিটিভ

মা সুস্থ, ছেলে এখন করোনা পজিটিভ - ছবি : নয়া দিগন্ত

করোনায় আক্রান্ত মায়ের সুস্থতার জন্য নিজের পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে মুখে অক্সিজেনের মাস্ক পরিয়ে মোটরসাইকেলে করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই ছেলেটি এখন করোনা পজিটিভ। ছয় দিন চিকিৎসার পর মা সুস্থ হলে বিজয়ীর বেশে সেই মোটরসাইকেলেই শুক্রবার সকালে মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন জিয়াউল হাসান টিটু। মায়ের সেবা করতে গিয়ে ছয় দিন হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ছিলেন জিয়াউল হাসান টিটু। রাতে করোনা ওয়ার্ডের কেবিনের মেঝেতে ঘুমাতে হয়েছিল তাকে। করোনা ওয়ার্ডে থাকার কারণে এবং মায়ের সেবা করায় টিটু করোনা আক্রান্ত হন। মা রেহেনা পারভীন, ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু ও ছোট ভাই রাকিব হাসান ইভান শনিবার সকালে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অ্যান্টিজেন টেস্ট করান। মায়ের ও ছোট ভাইয়ের প্রতিবেদন নেগেটিভ এলেও টিটু করোনা ‘পজিটিভ’। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মুনীবুর রহমান জুয়েল ফোন করে টিটুকে এ খবর জানান।

টিটু বলেন, আমার শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। কোনো সমস্যাও নেই। সুস্থই আছি, অক্সিজেন স্যাচুরেশনও ভালো। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।টিটু আরো বলেন, যতই বিপদ আসুক না কেন, আমার মা ও ছোট ভাই সুস্থ আছে, এতেই আমার আনন্দ।

জানা যায়, গত ১৭ থেকে ২২ এপ্রিল ছয় দিন ধরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কেবিনে চিকিৎসাধীন মায়ের সার্বক্ষণিক সেবাযত্ন করেছেন জিয়াউল হাসান টিটু ও তার ছোট ভাই রাকিব হাসান ইভান। ঝুঁকি আছে জেনেও তারা মায়ের সুস্থতার জন্য সেখানে অবস্থান নেন। এমনকি এই কাজে তাদের থামাতে পারেননি চিকিৎসক, নার্স ও স্বজনেরা।

ঝালকাঠি সদরের কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান টিটু বলেন, শনিবার সকালে মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে মাকে অ্যান্টিজেন কিট দিয়ে ফলোআপ টেস্ট করানো হয়। এরপর আমরা দুই ভাইও টেস্ট করাই। দুজনের ফলাফল নেগেটিভ এলেও আমার পজিটিভ এসেছে।’

টিটুর মা স্কুল শিক্ষিকা রেহেনা পারভীন বলেন, আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। আমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৮-৯৯ আছে। কিন্তু আমার যত্ন নিতে গিয়ে ছেলেটা (টিটু) করোনা আক্রান্ত হয়েছে। ওকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।

রোগীর অক্সিজেন সাপ্লাই ঠিক রাখতে শরীরের সঙ্গে গামছা দিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেলের পেছনে করোনায় আক্রান্ত মা বসে আছেন। সেই স্কুল শিক্ষিকা মা রেহেনা পারভীনকে লকডাউনের সময় মোটরসাইকেলে করে গত শনিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার ছেলে। আর এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে থাকা চেকপোস্ট থেকে সেই করোনা রোগী বহন করা মোটরসাইকেলটিকে দ্রুত ও অবাধে যেতে দিয়েছে পুলিশ। ওই সময় পুলিশের এক সদস্য একটি ছবি তুলে তা ফেসবুকে পোস্ট করে। এর পরেই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। সেই মা রেহেনা পারভীন (৫০) সুস্থ অবস্থায় বাসায় ফিরেছেন।

বাসায় ফিরে তিনি নামাজ আদায় করেছেন। তাকে দেখতে আসেন স্বজনরা। তাদের সঙ্গে কথাও বলছেন এই শিক্ষক। তার শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই, এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক রেহেনা পারভীন।

রেহেনা পারভীন ঝালকাঠির নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল হাকিম মোল্লার স্ত্রী। রেহেনাকে বহনকারী মোটরসাইকেলের চালক হচ্ছেন তারই মেঝো ছেলে জিয়াউল হাসান টিটু। টিটু শুক্রবার সকালে মা’কে সুস্থ অবস্থায় নলছিটির বাসায় নিয়ে এসেছেন। তার সাথে অপর একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন বড় ছেলে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান মিঠু ও ছোট ছেলে রাকিবুল হাসান ইভান।

জানা যায়, গত ৯ এপ্রিল তার মার করোনা শনাক্ত হলে নলছিটির সূর্যপাশা বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শনিবার দুপুরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফোন দিলে অ্যাম্বুলেন্স অন্য রোগী নিয়ে বরিশাল চলে গেছে বলে জানানো হয়। লকডাউনের মধ্যে কোনো গাড়ি যখন পাচ্ছিলেন না, তখন সংকটাপন্ন মায়ের জীবন বাঁচাতে মোটরসাইকেলে টিটু নিজের শরীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বেঁধে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে হাসপাতে নিয়ে আসেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement