১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সমস্যায় জর্জরিত ঘিওরের নিন্দাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

নিন্দাপাড়া আবাসনের জরাজীর্ণ ঘরে বাসিন্দারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন : নয়া দিগন্ত -

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের নিন্দাপাড়া এলাকায় বিগত ২০১১ সালে নির্মাণ করা হয় ‘নিন্দাপড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প’। দরিদ্রদের পুনর্বাসনকল্পে সরকারিভাবে নির্মিত এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাঁচটি ব্যারাকের ৫০টি কক্ষে এখনো বসবাস করছেন দুই শতাধিক মানুষ। ভূমিহীন, ছিন্নমূল ও অতি দরিদ্র প্রায় অর্ধশত পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে এখানে বসবাস শুরু করে। এরপর কেটে গেছে ১৩টি বছর। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালের অভাবে বেশির ভাগ ঘর এখন ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিনেও সংস্কার না করায় ঝড় বৃষ্টির সময় বসবাসরত লোকজনের আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। অধিকাংশ ঘরে বৃষ্টির সময় পানি পড়ে। পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ও নলকূপগুলো ব্যবহারের একেবারেই অযোগ্য হয়ে আছে। যত্রতত্র নোংরা পরিবেশে বেড়ে উঠছে শিশুরা।
জানা গেছে, ২০১১ সালে সিংজুরী কালীগঙ্গা নদীর কোল ঘেঁষে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। সিংজুরী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অসহায়, দরিদ্র ছিন্নমূল, হতদরিদ্র ও ভূমিহীন লোকজনের জন্য ৫০টি কক্ষ নির্মিত হয় এখানে। নির্মাণ শেষ হওয়ার পর থেকে দুই শতাধিক লোক এখানে বসবাস শুরু করে। পাঁচটি পরিবারের জন্য একটি টয়লেট নির্মাণ করা হলেও তা অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে অথবা ভেঙে পড়েছে। ময়লা, আর্বজনায় আর দুর্গন্ধের কারণে সেগুলো বর্তমানে ব্যবহারের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। কর্দমাক্ত ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় নলকূপ থাকায় পানি পান করাও অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষের বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিডি কার্ড এমনকি ১৫ টাকা কেজি দরের চালের কার্ডও নেই। নামমাত্র ২-৪ জনের শুধু এসব কার্র্ডধারী ব্যক্তি রয়েছে। তবে বছরে একবার তারা কাপড়, লুঙ্গি ও শীতের সময় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কম্বল পেয়ে থাকেন। হতদরিদ্র অধিকাংশ পরিবার বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে। আবার অনেকে রাজমিস্ত্রি ও মাটি কাটার শ্রমিক হিসেবেও কাজ করেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি তামেজ খাঁ জানান, নিন্দাপাড়া আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই শতাধিক মানুষ বসবাস করে। প্রতি বছর নদীর ভাঙনের সময় আমরা আতঙ্কে থাকি। বর্তমানে প্রতিটি ব্যারাকের রুমগুলোর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। আমাদের এখানে বসবাসরত মানুষের খোঁজখবর কেউ রাখে না।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা জনি মিয়া, আন্না বেগম, হানিফ মোল্লাসহ আরো অনেকে জানান, প্রতিটি কক্ষের অবস্থা খুবই খারাপ, বৃষ্টির সময় পানি পড়ে সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়। টয়লেটগুলো ভেঙে গেছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সিংজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আবু মো: আসাদুর রহমান মিঠু বলেন, নিন্দাপাড়া আবাসনটি বর্তমানে সংস্কার করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না আসায় এখনো কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এখানে বসবাসরত লোকজনের অবস্থাও খুবই খারাপ। তবে, আমার পরিষদে কোনো বরাদ্দ এলে আমি তাদের সাহায্য এবং সহযোগিতা করি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প আমি সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। এগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ইতোমধ্যে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। বরাদ্দ এলে জরুরিভাবে তা কার্যকর করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement