১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অসহনীয় লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত

কোথাও কোথাও দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্যুৎ থাকছে না ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা
-

সারাদেশে বিদ্যুতে ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় জনমানুষের জীবনে নেমে এসেছে নানা দুর্ভোগ। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষের জীবন। সেই সাথে বিদ্যুৎস্বল্পতায় কলকারাখানায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাঠানো নয়া দিগন্তের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এমন চিত্রই ফুটে ওঠছে।
যশোর অফিস জানায়, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে যশোরের মানুষ। দিন-রাতের একটি অংশ লোডশেডিং থাকায় গরমে হাসফাঁস করছে লাখ লাখ গ্রাহক। শহর ও শহরতলিতে ওজোপাডিকো-১ ও ২ এর আওতায় এক লাখ ৫৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রতিদিন গড়ে ১১০ মেগাওয়াট। সরবরাহ করা হচ্ছে গড়ে ৮৫ থেকে ৯০ মেগাওয়াট। অপরদিকে, যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১এর আওতায় গ্রাহক রয়েছে পাঁচ লাখ ৬৭ হাজার ২৬০ জন। ডিজিএম (টেকনিক্যাল) আবদুল হাকিম বলেন, তাদের প্রতিদিন গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে গড়ে ১৪০ থেকে ১৪৫ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ১১০ মেগাওয়াট।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, এ জেলায় বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়েণ শিল্প কারখানায় উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে। কিছু কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচ- গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। বিঘœ হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখা। নরসিংদীতে পল্লি বিদ্যুৎ-১ ও পল্লি বিদ্যুৎ-২ এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। দুটি সমিতিতে প্রায় ১৭ হাজার শিল্প কারখানা ও ২০ হাজার ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। এতে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক কর্মচারীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের অনেকেরই কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ফলে আয়রোজগারও কমে যাচ্ছে তাদের। শহরের তুলানায় গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিস্থিতি আরও করুণ। একবার বিদ্যুৎ গেলে কখন আসবে তা কেউ বলতে পারে না।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, এ জেলার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবির) ৮০ শতাংশ মিটার প্রি-পেইড। যে কারণে পিডিবির কাছে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা পড়ে আছে। এভাবে অগ্রিম টাকা পে করেও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোথাও না কোথাও বিদ্যুৎ থাকছে না ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। বিদ্যুতের এই ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা। গ্রাহকদের অনেকেই বলেন, দিনে-রাতে কমপক্ষে ১০-১৫ বার আসা-যাওয়া করে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের এই আসা-যাওয়ার খেলায় বিঘিœত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অফিস আদালতের কার্যক্রম। নষ্ট হচ্ছে গ্রাহকদের ফ্রিজে রাখা খাবার সামগ্রী।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিয়ে অতিষ্ট নীলফামারী জেলার ডোমার ও ডিমলা উপজেলার মানুষজন। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত হলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না এ দু’টি উপজেলায়। মে-জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় হাঁফিয়ে উঠেছে উপজেলার মানুষজন। সকাল থেকে রাত অবধি বিদ্যুতের আসা যাওয়ায় বিরক্ত হয়ে পড়েছে মানুষজন।
ডোমার বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নওশাদ আলম বলেন দিনে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন থাকলেও আমরা পাচ্ছি ৬ মেগাওয়াট। আর রাতে প্রয়োজন ১০ মেগাওয়াট আমরা পেয়ে থাকি ৭ থেকে ৮ মেগাওয়াট।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, অতি মাত্রায় গরম আর লোডশেডিংয়ে কুষ্টিয়ার পল্লী এলাকার মানুষের নাভিশ্বাস ওঠেছে। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার কোম্পানী (ওজোপাডিকো) এলাকায় লোডশেডিং সহনীয় পর্যায় থাকলেও পল্লী বিদ্যুতের আওতাধিন এলাকায় লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট সবাই। পিক আওয়ারেও লোডশেডিং দিতে হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন পল্লী বিদ্যুতের জিএম প্রকৌশলী ইসমাত কামাল।
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় প্রতিদিন গড়ে ১৬-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে রাতে বিদ্যুৎ না থাকাটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ মানুষ। নষ্ট হচ্ছে ফ্রিজে রাখা মাছ, গোশতসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী। বিদ্যুৎ নির্ভর সকল কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কেন্দুয়া জোনাল অফিসের এজিএম সালমান আমীন বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের চাহিদা ২২ মেগাওয়াট, আর পাচ্ছি ৮-৯ মেগাওয়াট। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই কম হওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement