১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা

বাসে যাত্রী হয়রানি চলছে দীর্ঘ বছর ধরে
-


ঈদুল আজহা উপলক্ষে দীর্ঘ ছুটি থাকলেও কুয়াকাটায় নেই তেমন পর্যটক। এতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন পর্যটক নির্ভর ব্যবসায়ীরা। পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় দুই-তিন মাস পর্যন্ত ভ্রমণ পিপাসু না থাকায় ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ধারণ ছিল ঈদুল আজহা উপলক্ষে কিছুটা হলেও তারা প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে পাবে। কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
গত বছর এমন দিনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে তীর ধরার ঠাঁই ছিল বললেই চলে। গত কয়েক বছর ধরে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার ১৫ থেকে ২০ দিন আজ অনেক আবাসিক হেটেলের রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে যেত। এ বছর স্বল্পসংখ্যক হোটেলের রুম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বুকিং হয়েছে বলে কয়েকটি হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। অনেকের ধারণা রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে পর্যটকদের আগমন কম। তবে অনেকে ধারণা করেছেন ঈদের দিন থেকে কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টি হওয়ায় বৈরী আবহাওয়ার কারণেও পর্যটক উপস্থিতি অনেকটা কম।
কুয়াকাটার উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন এমন এক ব্যক্তি শফিকুল আলম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় সারির হোটেল ছাড়া কুয়াকাটার কিছু হোটেলের ভাড়া বৃদ্ধি তথা দর্শনীয় স্পট ঘুরতে নিয়ে যাওয়া কিছু গাড়ির চালক এদের আচারণ ভালো না থাকার কারণে কিছুটা হলেও পর্যটক কম হতে পারে।

উপকূলীয় মানব উন্নয়ন সংস্থা-সিকোডা’র নির্বাহী পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, দূরপাল্লা থেকে কুয়াকাটায় ঘুরতে এসে অনেক পর্যটন ঢাকা থেকে লঞ্চ যোগে বরিশাল আসেন। সেখান থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে গেটলক গাড়িতে উঠে পড়েন বিপদে। বরিশাল থেকে যে গাড়িটি পটুয়াখালী ছেড়ে আসেন তাদের নেইম প্লেটেও লেখা থাকে বরিশাল-কুয়াকাটা। আবার বরিশাল থেকে বরগুনার গাড়িতেও লেখা থাকে বরিশাল-কুয়াকাটা, আমতলী-কলাপাড়ার গাড়িতেও লেখা থাকে বরিশাল-কুয়াকাটা। অপরিচিত কোনো পর্যটকদের ওই সব গাড়িতে ওঠার পরে যখন পথিমধ্যে নামিয়ে বলেন, আমাদের গাড়ি আর যাবে না আপনাদেরকে অন্য গাড়িতে উঠিয়ে দিই। তখন তারা পড়েন বিপাকে। যেমন, ভাড়াতো আগের গাড়িতে দেয়া, পরে যে গাড়িতে উঠিয়ে দেন সে গাড়িতে থাকে না সিট। যে কারণে অনেকসময় পরিবারপরিজন নিয়ে পড়তে হয় বিপদে। আবার অনেক পর্যটকের সাথে থাকা লাগেজ নিয়ে পড়েন সমস্যার মধ্যে। এসব বিড়ম্বনার কারণে অনেক পর্যটক কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। একমাত্র দক্ষিণাঞ্চলের গাড়িতেই পর্যটকসহ যাত্রী হয়রানি চলছে দীর্ঘ বছর ধরে। এ যেন মগের মুল্লুকের মতো।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, সাগরকন্যার সৌন্দর্য দেখতে এবারের ঈদ মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা থাকবে। শুরুতে তেমন আনাগোনা না থাকলেও এখন থেকে পর্যটক আসবে কুয়াকাটা এমন আশা করা যায়। আমাদের ট্যুর অপারেটররা প্রস্তুত আছেন সেবা প্রদানের জন্য।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, প্রতি বছর এই সময়ে আমাদের বেশির ভাগ হোটেল এবং রিসোর্টগুলোর রুম বুকিং হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত ৫০-৬০ শতাংশ বুকিং আছে এভারেজে।
কুয়াকাটা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটিতে বাড়তি পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা মাথায় রেখে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত তৎপরতার পাশাপাশি তিনজন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট, স্কাউটের প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও সৈকতে রেসকিউ টিম প্রস্তুত আছে। বাড়তি ভাড়া আদায় প্রতিরোধ ও হয়রানি বন্ধে নজরদারি করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সেবা দেয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement