অটোরিকশা চালক রাজু হতে চান কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার
- এম এ করিম সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
- ১০ জুন ২০২৪, ০০:১৭
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরার পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে নিচ্ছেন কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ (১৯)। উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের টিঘর গ্রামের পূর্ব পাড়ার মাসুম মিয়ার ছেলে রাজু তিন ভাই বোনের মধ্যে সরার বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রাজুর বাবা ব্রেন স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে পড়ে আছেন। বিগত পাঁচ বছর ধরে অটোরিকশা চালিয়েই সংসার চালান রাজু। সেই সাথে নিজের লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শুধু নিজের পড়ালেখার খরচই চালান না তিনি, একই সাথে সপ্তম শ্রেণীতে পড়–য়া তার ছোট ভাই রিফাত (১৪) ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া ছোট বোন ইভার (১২) পড়ালেখার খরচও বহন করছেন রাজু। একদিকে বাবার অসুস্থতা, অন্য দিকে নিজের ও ছোট দুই ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ সামলানোসহ সীমিত আয়ের রাজু দারিদ্র্যতার সাথে যুদ্ধ করলেও তার স্বপ্ন অনেক বড়। তিনি পড়ালেখা করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চান।
রাজু বলেন, ২০১৭ সালে পানিশ্বর সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন থেকে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে পঞ্চম শ্রেণী পাস করেন। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বসবাসকারী তার চাচা জুবায়ের আহমেদের বাসায় থেকে ভাদুঘর মাহবুবুল হুদা পৌর আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার পর ফের চাচার সাথে এসে সরাইল কালিকচ্ছ পাঠশালা উচ্চবিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন রাজু। এ সময় স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে শয্যাশায়ী হন তার বাবা। নিরুপায় হয়ে দরিদ্র সংসারের হাল ধরতে হয় রাজুর। এক দিকে সংসারের ব্যয়ভার বহনের চাপ, অন্য দিকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার খরচ সামলানোর চাপ- সব মিলিয়ে রাজুর পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় প্রায়।
কিন্তু পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহী ও মেধাবী রাজু হাল ছেড়ে দেননি। তিনি একটি অটোরিকশা কিনে নেন। এই অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন তিনি। সেই সাথে কালিকচ্ছ পাঠশালা উচ্চবিদ্যালয়ে ৯ম ও দশম অধ্যয়ন শেষ করে ২০২৩ সালে জিপিএ ৪.১৭ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। পরে সরাইল সরকারি কলেজে একাদশ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি এখানে অধ্যয়নের পাশাপাশি অটোরিকশা চালিয়ে সংসারের হাল ধরে আছেন।
রাজু বলেন, বিগত পাঁচ বছর ধরে অটোরিকশা চালিয়েই সংসারের ব্যয়ভার বহন করছি এবং নিজের ও ভাইবোনের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। সীমিত আয় দিয়ে এই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা কে জানে। তবে বাবার চিকিৎসা, ভাইবোনের পড়ালেখাসহ নিজের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়াটা তার জন্য বড় কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু স্বপ্ন ছেড়ে দেননি তিনি। তার এই স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছেন কলেজ পড়ুয়া অটোরিকশা চালক রাজু আহমেদ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা