১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দু’টি কালভার্ট বন্ধ করে দেয়ায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দী

কালভার্ট দুটি বন্ধ করে দেয়ায় পানিবন্দী হয়ে আছে শতাধিক পরিবার : নয়া দিগন্ত -

মিরসরাই উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের সরকারতালুক-ছত্তরুয়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার গত ১৩ দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট ও তাদের চলাচলের পথ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এ এলাকার লোকজন ও শিক্ষার্থীরা। সেই সাথে পানি ঢুকে যাওয়ায় বন্ধ করে দিতে হয়েছে অনেক দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বৃষ্টির পানিতে এখন তারা বন্দী অবস্থায় পড়েছেন।
জানা গেছে, সরকারতালুক গ্রামের উত্তর পাশে বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের মাঝখানে দীর্ঘ দিন ধরে দু’টি কালভার্ট ছিল। সড়কটি প্রশস্তকরণ নকশায় ওই কালভার্ট দু’টি না রেখে কাজ শুরু করা হয়। যার ফলে ঠিকাদার পুরনো কালভার্ট দু’টি ভেঙে ফেলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেন।
কালভার্ট দু’টি ভাঙার সময় স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও তাদের অভিযোগ আমলে নেয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা কিংবা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এই কালভার্ট বন্ধ করে দেয়ায় এবং সড়ক প্রশস্তকরণের কাজের অংশ হিসেবে সড়ক উঁচু করে ফেলায় সরকারতালুক-ছত্তরুয়া গ্রামের পানি নিষ্কাশন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর থেকে বসতঘরে পানিবন্দী হয়ে আছেন তারা। শিশুরা পানিতে পড়ে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটের পাশাপাশি রান্নাবান্না করতেও পারছেন না তারা। এ ছাড়া রাতে সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। শিগগিরই এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানান তারা।
স্থানীয় রেজাউল করিম নোমান বলেন, আমরা এর আগে কখনো এমন জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়িনি। এর আগে যতক্ষণ বৃষ্টি, ততক্ষণ পানি থাকত। বৃষ্টি শেষ হওয়ার সাথে সাথে পানি চলে যেত কালভার্ট দিয়ে। কালভার্র্ট দু’টি ভেঙে ফেলায় এখন আমরা নিদারুণ সমস্যার মধ্যে পড়েছি। কলভার্র্ট ভাঙার সময় এলাকাবাসী প্রতিবাদ জানালেও সওজ কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। এখন বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগেই আমরা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছি। এ ধরনের সংস্কারকাজ করা হচ্ছে কাদের স্বার্থে?
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, সরকারতালুক গ্রামের বাসিন্দারা পানিতে বন্দী হয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন- এমন খবর শুনে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা করারও নির্র্দেশ দিয়ে এসেছি।
মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, এই সড়কে দু’টি কালভার্ট ছিল। কালভার্টগুলো ভেঙে ফেলার সময় আমি নিষেধ করেছিলাম। আমি বলেছিলাম, কালভার্ট দু’টি দিয়েই এখানকার পানি নিষ্কাশন হয়। এখন এগুলো পুনরায় নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।
সড়ক ও জনপথের চট্টগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দীন খালেদ চৌধুরী বলেন, ওই সড়কে কোনো কালভার্ট না থাকায় নতুন করে কালভার্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়নি। আগে পাইপ দিয়ে এখানকার পানি নিষ্কাশন হতো। নতুন করে আমরা আরসিসি ড্রেনেজ করে দিচ্ছি। পানি ড্রেনের মাধ্যমে একটু দূরে অবস্থিত ব্রিজ দিয়ে চলে যাবে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ড্রেনের কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতা আর থাকবে না।
প্রসঙ্গত, মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট-রামগড় সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ভারত সরকারের এলওসি-৩ এবং বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১০০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার দেবে ৫১৩ কোটি সাত লাখ টাকা। বাকি টাকা ভারত সরকারের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে আনা হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ২৪৯.২০ মিটারের ৯টি সেতু ও ১০৮ মিটারের ২৩টি কালভার্ট এবং ৩৮ ফুট প্রস্থের ৩৮ কিলোমিটার সড়ক। এর আগে অন্য একটি প্রকল্পে বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কে ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে রামগড় থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত ১৬টি ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল। ব্রিজ ছাড়াও ব্রিজের পাশে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার এপ্রোচ সড়কও নির্মাণ করে তারা। রামগড়ে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা চালু হলেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টায় পণ্য যাবে ভারতে।


আরো সংবাদ



premium cement