খরস্রোতা নদী এখন মরা খাল
যশোরের দুঃখ ভবদহ- আব্দুল মতিন মনিরামপুর (যশোর)
- ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
১৯৬১ সালে যশোরের মরণফাঁদ ভবদহ স্লুইসগেট স্থাপন করা হয়। বছর বিশেকের সুফল পাওয়া গেলেও আশির দশকে জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর উপজেলা ও খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ এলাকার কৃষকদের জীবনে নেমে আসতে শুরু করে এক অভিশপ্ত অধ্যায়। স্লুইসগেটের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উল্লিখিত এলাকাগুলো। ১৯৮৮ সাল থেকে এই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। এই জলাবদ্ধতার মূল কারণ ভবদহের ভাটিতে নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়া।
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ভবদহ নামক স্থানে শ্রী নদীর ওপর ২১ ভেন্ট, ৯ ভেন্ট ও ৬ ভেন্টের নির্মিত স্লুইসগেট পাকিস্তান আমলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল। ১৯৬১ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। কিন্তু বর্তমানে ভবদহের নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় এই নদী এখন ‘যশোরের দুঃখ’ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর অভয়নগর ও সদর উপজেলা একং খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলাগুলো ‘মুক্তেশ্বরী টেকা শ্রী হরি ও আপার ভদ্রা হরিহর বুড়িভদ্রা’ নদী দিয়ে বেষ্টিত। যশোর শহরসহ এ অঞ্চলে উল্লিখিত নদী সিস্টেম ও এর সাথে সংযুক্ত খালের মাধ্যমে ৫৩টি বিলের বৃষ্টির পানি ও উজানের পানি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার বিলবোকড়, বিলকেদারিয়া ও বিল কপালিয়ায় জমা হয়ে ভবদহ স্লুইসগেট দিয়ে ভাটিতে পরিবাহিত হয়ে চলে যেত।
সমুদ্রের লোনা পানি প্রতিরোধে এবং কৃষিযোগ্য মিঠাপানি ধরে রাখার জন্য ষাটের দশকে হরি, টেকা ও শ্রী নদীর অভয়নগর উপজেলার ভবদহ নামক স্থানে ২১ ভেন্ট স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। এর ফলে পরবর্তীতে আশির দশক পর্যন্ত স্লুইসগেটের সুফল পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু এর পরবর্তীতে এ অঞ্চলের নদীগুলোর পানির মূল উৎস পদ্মার প্রবাহ থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে সাগরের জোয়ার ভাটার কারণে সাগর বাহিত পলি উজানের নদী ও খালে এসে পড়ে এবং এর তলদেশ ভরাট হতে থাকে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ভদ্রা ও তেলিগাতি নদীর মাধ্যমে সাগর থেকে পলিমাটি বাহিত হয়ে হরি, টেকা, মুক্তেশ্বরী নদী ও আপার ভদ্রা, হরিহর, বুড়িভদ্রা নদী ও এগুলোর সাথে সংযুক্ত খালগুলো ভরাট হয়ে যায়।
বছর পাঁচেক আগেও ভবদহ স্লুইসগেট থেকে শিবসা নদী পর্যন্ত বড় বড় মাছধরা ট্রলার চলাচল করতে পারত। কিন্তু অংশীজনদের আপত্তি সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুল সিদ্ধান্তে ভবদহের স্লুইসগেট বন্ধ করে সেখানে বিদ্যুৎচালিত মোটর ব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে জোয়ারের সাথে আসা পলি নদীতেই থেকে যায়। এমনটিই দাবি করছে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসীর।
সরেজমিন দেখা যায়, ২১ ভেন্টের ওপর ১৩টি এবং ৯ ভেন্টের ওপর পাঁচটি মোটর পাম্প বসানো আছে। সাথে আছে আরো চারটি পাওয়ার পাম্প। নদীগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে। নদীর তলদেশ শুকিয়ে উঁচু হয়ে আছে। নালা দিয়ে কোনো রকমভাবে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পাশে পলি জমে থাকা স্থান দখল করতে শুরু করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অনেকে নদীর ভেতরে জায়গা দখল করে মৎস্য ঘের তৈরি করে রেখেছে।
এ ব্যাপারে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী বলেন, এক রাজনীতিক ও কয়েকজন আমলার ষড়যন্ত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই জনপদকে লবণাক্ত জলাভূমিতে রূপান্তর করার চেষ্টা করছে। কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, টিআরএম ছাড়া বিকল্প কোনো উপায়ে ভবদহের জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব না। যত দ্রুত সম্ভব টিআরএম প্রকল্প চালুর মধ্য দিয়ে ভবদহে নদীর নাব্যতা আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা