১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উৎপাদন কম হওয়ায় হতাশ চাটমোহরের লিচুচাষিরা

বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গুটি হতে না হতেই ঝরে যায় লিচু
-


বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে পাবনার চাটমোহরে লিচুর উৎপাদন কম হয়েছে। কিছু কৃষকের বাগানে সামান্য লিচু টিকে থাকলেও অধিকাংশ লিচু বাগান মালিক এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা বার্ষিক অগ্রিম বাগান কিনে থাকেন তারাও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চাটমোহরে ৪৮০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিল। এ এলাকায় সাধারণত মোজাফ্ফর জাতের লিচু বেশি চাষ হয়। বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের সামান্য কিছু লিচু চাষ হয় এ এলাকায়।
বিলচলন ইউনিয়নের কুমারগাড়া গ্রামের লিচুচাষি আব্দুল মজিদ জানান, প্রায় ২৭ বিঘা জমিতে লিচু চাষ করেছেন তিনি। এ বছর তিনি তার বাগানের সব লিচু মাত্র সাত লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। লিচু ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে পাকা লিচু সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। তিনি আরো জানান, লিচু গাছে যখন ফুল আসে তখন দুই দিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় ফুল নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া অত্যধিক তাপমাত্রার কারণেও লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝড়-বৃষ্টিতে আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিচু বাগানগুলো।

বিলচলন ইউনিয়নের দোলং গ্রামের লিচুচাষি ও চাটমোহর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক ফিরোজা পারভীন জানান, লিচু গাছে যখন ফুল আসে তার পর পরই সামান্য বৃষ্টিপাত হয়। ফলে ফুল পচে যায়। তার প্রায় ২০টি লিচু গাছ থাকলেও এবার খাওয়ার লিচুও পাননি তিনি।
গুনাইগাছা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের লিচুচাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, লিচুর গাছে পর্যাপ্ত ফুল দেখে চাষিরা বাম্পার ফলনের আশা করেিেছলেন। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে গুটি হতে না হতেই লিচু ঝড়ে যায়। রামচন্দ্রপুর, জালেশ্বর, নতুনপাড়া, মন্ডলপাড়া, গুনাইগাছা, মল্লিকচক, জাবরকোলসহ এ এলাকার লিচু চাষিরা তিন ফসলি জমিতে অন্য ফসল চাষ না করে লিচুর আবাদ করেন। বছরে একবার লিচু বিক্রি করেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার গাছে চার ভাগের এক ভাগ লিচু ছিল। ফলন বিপর্যয়ের কারণে দাম বেশি পেলেও উৎপাদন কম হওয়ায় হতাশ হয়েছেন লিচুচাষিরা।

লিচু ব্যবসায়ীরা আব্দুল বারেক জানান, ফুল আসার আগেই যেসব লিচু ব্যবসায়ী অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে বাগানের লিচু কিনেিেছলেন তারা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। যারা বাগান থেকে পাইকারি দরে পাকা লিচু কিনে বাজারে খুচরা বিক্রি করছেন তারা লাভবান হচ্ছেন। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি একশ লিচু ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকায়। চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার এস এম আলী আহম্মেদ নামক একজন ভোক্তা জানান, এ বছর বাজারে লিচুর দাম বেশি হওয়ায় ভোক্তাদের পক্ষে লিচু কিনে খাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ জানান, লিচুর ফুল বের হওয়ার পর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তীব্র রোদ ও খড়ায় লিচুর গুটি ঝরে যায়। আমরা লিচুচাষিদের সব সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছি। বাগান মালিক ও বাগান ক্রেতারা ইতিমধ্যে ৩৬০ হেক্টর জমির লিচু সংগ্রহের কাজ শেষ করেছেন। উৎপাদন কম হলেও কৃষক ভালো দাম পেয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে হওয়া ঝড় বৃষ্টিতে নাবী লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement