১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সর্বত্র টেকসই বাঁধের দাবি

এখনো থমকে আছে চালিতাবুনিয়া

রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ বিলীন : নয়া দিগন্ত -


বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে চুরমার। ঘরের চালে পড়ে রয়েছে বড় বড় গাছ। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি। থাকার ব্যবস্থা নেই। ভেসে গেছে ঘের ও পুকুরের মাছ। পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া গবাদিপশুর গন্ধে টেকা দায়। সুপেয় পানি ও খাবার সঙ্কট প্রকট। আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে বিদ্যুৎ। এখনো নিভু নিভু করেছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। এমন চিত্র পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের যেসব এলাকায় পানি ঢুকেছে ওইসব গ্রামের পানি এখনো নামেনি। ফলে এখনো পানিবন্দী রয়েছে এসব এলাকার মানুষ। থমকে রয়েছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। তছনছ পুরো ইউনিয়ন। এমন পরিস্থিতেও ত্রাণের আশায় ধরনা না দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের শুধু চালিতাবুনিয়া নয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী ছিল অনেক পরিবার। ঝড়ো বাতাসে বাসিন্দাদের কেড়ে নিয়েছে শেষ আশ্রয়টুক। ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকার বাসিন্দারা এখন বসবাস করছেন স্বজনদের বাড়িতে, কেউবা বাঁধের উপর। এছাড়াও রাঙ্গাবালী সদর, ছোটবাইশদিয়া, বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবি ইউনিয়নের ২৫টি স্থান প্লাবিত হয়েছে।

রাঙ্গাবালীর অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষি এবং মৎস্য পেশার উপর নির্ভরশীল। ফলে উপকূলের একেকটি ঝড় সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যার তাদের। এ কারণে এই এলাকার মানুষদের ঘুরে দাঁড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়। চালিতাবুনিয়ার মতো উপজেলার সবার দাবি ‘ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।’
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রাঙ্গাবালীর সাধারণ মানুষদের অবশ করে গেছে। রেমালের তাণ্ডবে সাড়ে ৮ হাজার বসতবাড়ি, ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ১৬৪টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ১ হাজার ৫২৫টি ঘের ও পুকুর, ৩ দশমিক ৫ হেক্টর বনাঞ্চল, ২ হাজার ৬৬১ হেক্টর বনায়ন, ৫২০ হেক্টর জমির কৃষি শস্যক্ষেত ও বীজতলা, ১১ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ, ১১ হাজার ১৭৮টি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও ৭৭ কিলোমিটার কাচা-পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৫৭৭টি গবাদিপশু মারা গেছে। এতে ১১৫ কোটি ৯০ লাখ ৫৭ হাজার ৪০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকারি হিসেবে ১৪ হাজার পরিবারে ৪৮ হাজার ৩০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেমালের সময়কালে উপজেলার ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত ছিল। এতে ২০ হাজার মানুষ এবং ৫ হাজার পশু আশ্রয় নিয়েছিল। রেমালের আভাস পেয়েই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয় পুরো রাঙ্গাবালী উপজেলার ২৩ হাজার গ্রাহক। রেশ কাটার পরই উপজেলা শহরে বিদ্যুৎ লাইন সচল হলেও গ্রামে পৌঁছেনি এখনো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ছয় ইউনিয়নে ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫০০ প্যাকেট শিশু খাদ্য ও ৯০ মে. টন চাল বিতরণ করা হয়েছে এবং ক্ষতি পোষানোর জন্য তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিবে।
পটুয়াখালী-৪ (রাঙ্গাবালী-কলাপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো: মহিব্বুর রহমান বলেন, ‘উপকূলের যেসব মানুষ বেড়িবাঁধ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কথা প্রধানমন্ত্রী অবগত আছেন। ইতোমধ্যে তিনি সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন যে যে সমস্যা যার যার মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে অনতিবিলম্বে এগুলোর ক্ষতিপূরণের রিপোর্ট তার কাছে প্রেরণ এবং যথাসময়ে সমাধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement