‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’
- আহমেদ বায়েজীদ বরিশাল
- ৩১ মে ২০২৪, ০০:০৫
সোমবার মধ্যরাতের পর এক হাতে টর্চলাইট, আরেক হাতে টেটা (স্থানীয়ভাবে কোঁচ নামে পরিচিত) নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন সুজন খান। সকালে সূর্য ওঠার কিছু আগে যখন ঘরে ফেরেন তখন তার বড় একটি ডালাভর্তি নানা জাতের মাছ। সৌখিন মাছ শিকারী সুজন জানতেন ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে যে কয়েক ফুট উঁচু জোয়ারের পানি এসেছে তার সাথে প্রচুর মাছ থাকবে। সেই রাতে সুজনের সাথে ছিলেন রাজিব, সম্পর্কে দুজনে চাচাতো ভাই। ভোর বেলা বাড়ি ফেরার সময় রাজিবের ঝুড়িতেও ছিল কয়েক হাজার টাকার মাছ।
সৌখিন মাছ শিকারী এই দুই যুবকের বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল গ্রামে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দাড়িয়ালসহ আশপাশের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে কয়েক ফুট উঁচু জোয়ারের পানিতে। সেই পানিতে মাছ শিকারের মহোৎসব শুরু হয় সোমবার রাত থেকে। পরবর্তী দুই দিনে এই গ্রামে আরো কয়েক শ’ মাছ শিকারি ঝুড়িভর্তি মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কেউ টেটা হাতে, কেউ ঝাঁকি জাল নিয়ে, কেউবা পলো নিয়ে নেমেছেন মাছ ধরতে। কেউ পেতেছেন ‘চাই জাল’।
সুজন বলেন, মাঝ রাতে জোয়ারের পানি যখন নামতে শুরু করে তখনই টর্চলাইট আর কোঁচ নিয়ে বের হই। সকাল পর্যন্ত কয়েক হাজার টাকার মাছ ধরেছি। কলেজপড়–য়া এই যুবক জানান, তার শিকার করা সবচেয়ে বড় মাছটি ছিল ৩ কেজি ওজনের একটি মিরর কার্প, যেটি পেয়েছেন মঙ্গলবার সকালে। এ ছাড়া রুই, কাতল, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ শিকার করেছেন। দূরে কোথাও যেতে হয়নি, বাড়ির আশপাশেই পেয়েছেন এসব মাছ।
সৌখিন মাছ শিকারিদের এই আনন্দ উৎসবের বিপরীত চিত্রটা ছিল দাড়িয়ালের মাছ চাষিদের জন্য। প্রায় সব চাষির পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। বড় অঙ্কের ক্ষতির শিকার হয়েছেন তারা। স্থানীয় মাছ চাষি আরিফুর রহমান খান জানান, তার চারটি পুকুর তলিয়ে গেছে। এর আগে বিভিন্ন সময় জোয়ারের পানিতে পুকুর ডুবলেও চারপাশে জাল দিয়ে মাছ রক্ষা করেছেন; কিন্তু এবার জোয়ারের বেগ এত বেশি ছিল যে জাল দিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
আরিফ বলেন, মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে পুকুর ডুবে গেছে। চারদিক থেকে পানি ঢুকেছে যে কারণে শত চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। আমার একটি পুকুরেই ১০ হাজার পাঙ্গাশ মাছ ছিল। এ ছাড়া অন্য পুকুরগুলোতেও রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ ছিল।
কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটি এখনই বোঝা যাচ্ছে না বলে জানান আরিফ। তবে তার প্রতিটি পুকুরে লক্ষাধিক টাকার মাছ ছিল। আরিফ বলেন, কত মাছ বেরিয়ে গেছে সেটা এখন বোঝার উপায় নেই। তবে মৌসুম শেষে আমাদের বিরাট অঙ্কের লোকসান গুনতে হতে পারে।
দাড়িয়ালে জোয়ারের পানি প্রবেশ শুরু করে রোববার থেকেই। তবে সোমবার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে বিপজ্জনক মাত্রায় পানি ঢুকতে শুরু করে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে কোমর সমান পানি উঠে যায়। যে কারণে মাছ চাষিদের পক্ষে পুকুরগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা