১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সব হারিয়ে নিঃস্ব কলাপাড়ার দুই চরের বাসিন্দারা

ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব
ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের সামনে একটি পরিবারের সদস্যরা : নয়া দিগন্ত -

ঝড়ের রাতে মুসা-তানিয়া দম্পত্তি তাদের সন্তানদের নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে সেখান থেকে কলাপাড়া উপজেলার কাউয়ারচরে ফিরে এসে দেখেন তাদের বসতবাড়িটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
শুধু তাদের একার বসতবাড়ি নয়, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী কাউয়ার চরে কারও ঘর নেই, কারো বা রান্নার চুলাটিও নেই। এক বেলা খাবে সে পরিস্থিতিও নেই অনেকের। কারও জাল-নৌকা জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি মারা গেছে। ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মেঠোপথ। স্বাভাবিকভাবে চলাচলের অবস্থাও নেই কাউয়ার চরে। জোয়ারের পানি না নামায় এখনো থইথই করছে পুরো গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সাগরপাড়ের জনপদ কাউয়ার চর ও চর গঙ্গামতি একেবারে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কাউয়ার চর ও চর গঙ্গামতি গ্রামের মানুষের বেশির ভাগই জেলে। আবার কেউ কেউ দিন মজুরি করেও জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক পরিবার হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন করেন। কারও রয়েছে মাছ চাষের পুকুর ও ঘের। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমাল তাদের আয়ের সব পথ একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রেমালের তাণ্ডবে কলাপাড়া উপজেলার কাউয়ার চর ও চর গঙ্গামতির বাসিন্দাদের ক্ষয়ক্ষতিই বেশি হয়েছে। এত ক্ষতি হওয়ার কারণ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে গ্রাম দু’টির অবস্থান হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সময় সৃষ্ট বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের কারণে এমন ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, চরের বসতঘরগুলো বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু ঘরের চাল উড়ে গেছে। পুকুর ও মাছের ঘের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। বের হয়ে গেছে চাষের মাছ। চরের বাসিন্দারা বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কটে পড়েছেন সবচেয়ে বেশি। চর দু’টির অনেক টিউবওয়েলই জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
এলাকার ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, কাউয়ার চরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে গভীর নলকূপ ছিল ২৭টি। অগভীর নলকূপ ছিল ৩৫০টি। এসবের মধ্যে তিনটি গভীর নলকূপ ও ১৪৫টি অগভীর নলকূপ জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। চর গঙ্গামতি এলাকার ইউপি সদস্য সিদ্দিক হাওলাদার জানান, তার এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের দিকে গভীর নলকূপ ছিল ১৮টি। শ্যালো টিউবওয়েল ছিল ৪০০টি। এর মধ্যে ১৭টি গভীর নলকূপ এবং ৪০০টি শ্যালো টিউবওয়েলই জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
কাউয়ার চর এলাকার আটশ’ পরিবারের বসবাস। সব মিলিয়ে লোকসংখ্যা প্রায় দুই হাজার ৫০০ জন। এই চরের বাসিন্দাদের অন্যতম সমস্যা হলো, চরে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। চর গঙ্গামতি চরে তিন হাজার মানুষের বসবাস। মাত্র একটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ঝড়ের সময় একটি আশ্রয়কেন্দ্র সব মানুষের জায়গা সঙ্কুলান হয় না। এই চরের মধ্যবর্তী স্থানে আরো একটি আশ্রয়কেন্দ্র দরকার।
কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম জানান, দু’টি চরের মানুষদের ক্ষয়ক্ষতির খবর নিয়েছেন তিনি। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা জানতে হবে। দুর্গত মানুষদের জন্য খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে যথাযথ ব্যবস্থাও নেয়া হবে। যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন, যারা জাল-নৌকা হারিয়েছেন, তাদেরকেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহায়তা করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement