১৭ জুন ২০২৪
`

জামালপুরে ভাঙন ঠেকাতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ পাইলিং

বর্ষা এলেই পানিতে ভেসে যায় দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের বাঁধ নির্মাণ করছেন স্থানীয়রা : নয়া দিগন্ত -


জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন ঠেকাতে এলাকাবাসীদের স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে বাঁশ পাইলিংয়ের কাজ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাসহ বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের প্যোলাকান্দি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে দেখা দেয় ভয়াবহ ভাঙন। তাই আগামী বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বাঁশ দিয়ে আঁড়াআঁড়ি বাঁধ নির্মাণ করছেন। গত এক সপ্তাহের অধিক সময় ধরে এলাকাবাসী নিজেদের অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রম ব্যয় করে এ কাজ করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৪ সালে এই এলাকাটি প্রথমে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়ে। প্রায় ৫০ বছরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের প্যোলাকান্দি নামাপাড়া, মধ্যপাড়া, পূর্বপাড়া, ফারাজীপাড়া, মাদারের চর, মদনের চর ও গুমের চর গ্রামের অধিকাংশ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বন্যা মৌসুমে নদের পানির প্রচণ্ড তোড়ে অসংখ্য বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়। বছরের পর বছর ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও সরকারিভাবে ভাঙন রোধে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাহিদ হাসান বলেন, স্থানীয় লোকজন নিজেদের অর্থে বাঁশ কিনে স্বেচ্ছাশ্রমে পাইলিং করছেন। অন্তত এক কিলোমিটার এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। প্রতিটি বাঁশ পাইলিং নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা। এতে তাদের প্রায় সাত লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদের ভাঙনকবলিত এলাকায় বাঁশের পাইলিংকাজে যোগ দিয়েছেন এলাকার বয়স্ক, যুবক, তরুণ ও কিশোররাও। তাদের মধ্যে কেউ পাইলিং করছেন, কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ বা দূর-দূরান্ত থেকে বাঁশ কেটে পাইলিং স্থানে নিয়ে আসছেন। প্যোলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপির সাবেক সদস্য আহাম্মদ আলী বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাননি তারা। তাই বাধ্য হয়ে নিজেরাই বাঁশের বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

বাহাদুরাবাদ ইউপির চেয়ারম্যান শাজাহান মিয়া বলেন, ভাঙনরোধে সরকারিভাবে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। যখন ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে তখন কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তিনিও এলাকাবাসীর এই মহৎ কাজে সহযোগিতা করবেন বলে জানান।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাহিদ হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে স্থানীয়দের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ এবং সদর উপজেলার বুক চিড়ে বয়ে গেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। শুস্ক মৌসুমে মরা খাল আর বর্ষা মৌসুমে আগ্রাসী রূপ। যার করাল গ্রাসের শিকার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নবাসী।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পোল্যাকান্দি এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের যে অংশে ভাঙন, সেখানে ইতোমধ্যে প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement