১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আন্ধারমানিক পাড়ে বর্জ্যরে স্তূপ ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র্য

নদীর পাড়ে আবর্জনার স্তূপ : নয়া দিগন্ত -

আন্ধারমানিক নদী। নামের মাধ্যমে যেন মন ছুঁয়ে যায়। কিন্তু সেই আন্ধারমানিক এখন মৃত প্রায়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার প্রধান নদী। নামটি শুনে অনেকেই হয়তো টিপ্পনি কেটে বলবেন, অন্ধকারে আবার মানিক হয় কী করে! আসলে এ এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় এ নদী ‘মানিক’ ছড়িয়েছে। নিজের দেহ নিংড়ে উৎপাদন করছে কৃষকরা সোনালি ফসল। বুকে আগলে রাখছে রুপালি ইলিশ।
কলাপাড়া পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান নদী আন্ধারমানিক পাড়জুড়ে প্লাস্টিক আর পলিথিন বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বহমান নদীর এমন পরিণতির জন্য তীরবর্তী ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন অনেকে। আবার সঙ্কট কাটাতে কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার অভিযোগ পরিবেশ অধিদফতরের বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, আন্ধারমানিক নদীর পানি প্রবাহের দৈর্ঘ্য ৩৯ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ৩৩০ মিটার। এই নদীর গভীরতা ১৫ মিটার। এখন প্রতি বছর অন্তত পাঁচ ফুট কমে যাচ্ছে নদীর প্রস্থ। নদীটির দুই পাড়ে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাছ বাজার, হ্যালিপোর্টসহ ব্রিজের সংলগ্ন এলাকায় নদীর তীরে স্থানীয়দের নিয়মিত হোটেল-রেস্তেরাঁর পচা ও উচ্ছিষ্ট খাবারসহ নানা রকমের বর্জ্য ফেলায় বেহাল অবস্থা। বহুতল পাকা-আধাপাকা ভবনসহ টিনশেড স্থাপনা তোলা হয়েছে আন্ধারমানিকের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা অন্তত ১০টি ইটভাটার ময়লাও নদীতে ফেলা হচ্ছে ফ্রি-স্টাইলে।
চর ভরাটের আগেই গোপনে অনেকেই চাষযোগ্য খাস কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত নিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যে সাতটি সøুইস সংযুক্ত খাল ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। পলি পড়ে এবং নতুন চর জেগে ৪০ কিলোমিটার নদীটির প্রায় ২৫ কিলোমিটার স্থায়ীভাবে শুকিয়ে গেছে। ১৯৬০ এর দশকে স্থানীয় সরকার আন্ধারমানিক নদীর ওপর অনেক বাঁধ নির্মাণ করে।
পৌরশহর এলাকার নাচনাপাড়া ফেরিঘাট থেকে ফিশারি পর্যন্ত দূষণের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। আর এ পানিতে গোসলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করায় নদীতীরবর্তী মানুষ চর্মরোগ, কৃমির প্রবণতা, যকৃতের অসুস্থতাসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কলাপাড়া পৌরশহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীটির এক প্রান্ত মিলেছে বঙ্গোপসাগরে এবং অন্য প্রান্ত রাবনা বাঁধ চ্যানেলে মিলিত হয়েছে। মধ্যখানে আন্ধারমানিকের সাথে মিলিত হয়েছে কচুপাত্রা, আরপাঙ্গাশিয়া ও দোন নদীসহ এর শাখা-প্রশাখসহ মরে গেছে মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের সাপুড়িয়া খালও। ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নসহ মধুখালী, চড়পাড়াসহ অন্তত ১০টি গ্রামের নৌ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। টিয়াখালীর অংশের লোন্দা নদীর হয়েছে একই হাল। আরো ভরাট হয়ে গেছে এ নদীর সাথে মিলিত ২০টি খাল। চিংগড়িয়া খালটিরও অস্তিত্ব বিপন্ন প্রায়। এতে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় পৌরশহরে।
খাল-নদী ভরাটের কারণে কৃষি ভাণ্ডার খ্যাত নীলগঞ্জ, ধানখালী ইউনিয়নসহ তালতলী উপজেলার চাউলাপাড়া কড়ইবাড়িয়া, ইউনিয়নের কৃষি উৎপাদনেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। ভরাট হয়ে গেছে দোন নদীর প্রায় ২৫ কিলোমিটার। বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্রা ও মৎস্যসম্পদ।
কলাপাড়ার প্রবীণ সাংবাদিক শামসু আলম আক্ষেপ করে বলেন, দুই পাড়ের মানুষের প্রাণের দাবি অতি দ্রুত নদী ড্রেজিং করে পানি প্রবাহ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক। নদীটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।
নীলগঞ্জের কৃষক আলী আহম্মেদ ঘরামী বলেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় খালে পানি না থাকার কারণে আমাদের কৃষকদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, পরিবেশ রক্ষায় আমি পৌরসভার সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা নিবো।


আরো সংবাদ



premium cement
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি চলাচল স্বাভাবিক মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন, যেসব বিষয়ে আলোচনা হবে ট্রাইব্যুনালে যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি কংগ্রেসে সমালোচকদের সম্মুখীন ব্লিংকেন সিরিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে রাশিয়া, সামরিক ঘাঁটির নিরাপত্তার ওপর জোর গাজীপুর ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের চাপায় অটোরিকশার ৪ যাত্রী নিহত আরেক মামলায় খালাস পেলেন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন রাশিয়া আবারো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে 'ওরেশনিক ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবহার করতে পারে : যুক্তরাষ্ট্র অভয়নগরে ট্রাকচাপায় নিহত ২, ট্রাকে আগুন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের আগেই নিরাপত্তা স্মারক বাইডেনের

সকল