দস্যুর দখলে লক্ষ্মীপুরের দ্বীপ চর মেঘা
- আ হ ম মোশতাকুর রহমানলক্ষ্মীপুর
- ১১ মে ২০২৪, ০০:৩৯
লক্ষ্মীপুর-ভোলা জেলার সীমান্তবর্তী চর রমনী মোহন ইউনিয়নের মেঘনা নদীতে জেগে উঠা দ্বীপ চর মেঘা দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে রাসেল খাঁর নেতৃত্বে একদল দস্যুর বিরুদ্ধে। অস্ত্রের মুখে কোটি টাকার সয়াবিন লুট করে নিয়ে গেছে তারা। গত কয়েক দিন থেকে দস্যুরা ওই চরে অবস্থান নিয়ে কৃষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়। জমির সয়াবিন ও চরের বাড়িঘর হারিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন দেড় শতাধিক কৃষক।
এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে গত সোমবার লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে রুহুল আমিন মাতাব্বর নামে এক কৃষক। এতে রাসেল খাঁকে প্রধান করে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রুহুল আমিন মাতাব্বর সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের সিরাজুল মাতাব্বরের ছেলে।
অভিযুক্ত রাসেল খাঁ ভোলা জেলার রাজাপুর ইউনিয়নের মৃত শামছু খার ছেলে ও দস্যুবাহিনীর প্রধান। অন্য অভিযুক্তরা হলো- রাসেল খাঁর ভাই হালিম খাঁ, মিন্টু খাঁ, মাপু খাঁ, মাহবুবুল হক রাসেল, মামুন খাঁ, জসিম বারী, আফজল মাতাব্বর, খবির সিকদার, ছোয়াদ ব্যাপারি। অন্যরা লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের চর কাছিয়া এলাকার শাহজালাল রাহুল, কালাম ব্যাপারি, রাজ্জাক ব্যাপারি, সাহেব আলী, জুলহাস, বাবুল ব্যাপারি, হাকিম আলী, সালাহ উদ্দিন, সাদুদম ব্যাপারি, সুলতান ব্যাপারিসহ ১৫-২০ জন।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগে সদর উপজেলার চর রমনী মোহন ইউনিয়নের চর মেঘা গ্রামের মেঘনা নদীতে একটি চর জেগে উঠে, যা ওই ইউনিয়নের ২ ও ৩নং ওয়ার্ড এলাকা সূত্রে জানা যায়। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জেগে উঠা ওই চরে ৫ শতাধিক একর জমিতে ধান ও সয়াবিনসহ বিভিন্ন কৃষি ফসল আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক অসহায় কৃষক। এর মধ্যে বিগত ৪-৫ বছর ধরে চরটি দখলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে ভোলা থেকে আসা রাসেল খাঁ, হালিম খাঁ ও মিন্টু খাঁর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী। এ চর দখলকে কেন্দ্র করে শিশুসহ একাধিক হত্যা, গুম, ফসলাদি লুট, চাঁদাবাজি ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আদালতে একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে। এ দিকে প্রতিবারের মতো চলতি মৌসুমেও সয়াবিনের আবাদ করেছেন চর মেঘার কৃষকরা। কিন্তু পাকা সয়াবিন তুলতে গেলেই বাধে বিপত্তি। সর্বশেষ গত রোববার রাত থেকে দস্যুরা সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। সোমবার দিনের বেলায় ফলনকৃত ফসল তুলে আনতে গেলে গুলি করে ধাওয়া করে দেয় সন্ত্রাসীরা। সয়াবিন কাটতে হলে প্রত্যেক কৃষককে ৫০ হাজার টাকা করে দিতে হবে চাঁদা। রাসেল খাঁর দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চর দখলে নেয় তার দস্যু বাহিনী। লুট করে নিয়ে যায় কৃষকদের কোটি টাকা মূল্যের ফসল। এমনকি ওই চরে বসবাসকারী কৃষকদেরও তাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়া হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
সরেজমিন গত মঙ্গলবার চর রমনী ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট এলাকা থেকে ট্রলার নিয়ে প্রায় ৬ কিলোমিটার অদূরে চর মেঘা এলাকার গিয়ে দেখা যায়, বিরোধকৃত ওই চরে রাসেল খাঁর নেতৃত্বে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সারিবদ্ধভাবে মেঘনা নদী থেকে চরে প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে ভোলা থেকে আসা শতাধিক দস্যু। রাসেল খাঁর ভাই মিন্টু খাঁর নেতৃত্বে অস্ত্রধারী আরেকটি দল স্পিড বোটে করে মেঘনা নদীতে মহড়া দিচ্ছে। কোনো ট্রলারই ওই চরে ভিড়তে চাইলে অস্ত্রের মুখে ফিরিয়ে দিচ্ছে তারা। এতে প্রাণের ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে নিরীহ কৃষকরা। এ সময় তাদের (দস্যু) সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে গণমাধ্যম কর্মীদের নৌকাও ফিরিয়ে দেয়া হয়।
চর মেঘার কৃষক হারিছ সর্দার বলেন, নতুন জেগে উঠা এ চরে চাষাবাদ করতে গেলেই রাসেল খাঁর দস্যুরা ১ থেকে দেড় লাখ টাকা করে কৃষকদের কাছে চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় আমার হাত-পা মুড়িয়ে ভেঙে পঙ্গু করে দিয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় দস্যুরা আমার ছেলে রাকিবকে গলা কেটে হত্যা করে লাশ ঘুম করে রেখেছে। আজো ছেলের লাশ খুঁজে পাইনি। শেখ ফরিদ নামে আরেক কৃষককেও তারা হত্যা করেছে। এরা বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র ও ডাকাত ভাড়া করে এনে বিগত পাঁচ বছর ধরে আমাদের ওপর এ নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এর ভয়ে শত শত নিরীহ পরিবার বাড়িঘর ছাড়া। এদের কবল থেকে রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ভুক্তভোগী বিবি আনঞ্জুমা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, গত ৮ মাস আগেও রাসেল খাঁর বাহিনীর লোকজন হামলা চালিয়ে আমাদের তিনটি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। ভুক্তভোগী সিরাজ সর্দার বলেন, বিগত দুই বছর তারা আমাদের ফসল উঠাতে দেয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দস্যু বাহিনীর প্রধান রাসেল খাঁ বলেন, চাঁদা দাবি, সয়াবিন লুট ও অস্ত্র প্রদর্শনে চর দখলের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিরোধীয় ওই চরটি আমাদের ভোলা জেলার অন্তর্গত। ওখানে আমাদের ৩০০ একর জমি রয়েছে। সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে আমরা চাষাবাদ করছি। লক্ষ্মীপুরের কিছু সন্ত্রাসী চরে আমাদের আবাদকৃত সয়াবিন লুট করতে না পেরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহেল রানা বলেন, চর দখল ও সয়াবিন লুটের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা