১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


মাঠজুড়ে রবিশস্য, তবুও কৃষকের মলিন হাসি

প্রচণ্ড খরতাপের মধ্যে বাধ্য হয়ে অপরিপক্ব মুগডাল তুলছেন কয়েকজন শ্রমিক : নয়া দিগন্ত -

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তীব্র তাপদাহে দেশজুড়ে চলছে মরুর উষ্ণতা। ঘরেবাইরে কোথাও নেই একদণ্ড শান্তি। গরমের কারণে বাজারঘাট, পাড়ামহল্লায় নেই মানুষের কোলাহল। তবুও চলে যাওয়া মাসটি মনে রাখবে সবাই। কারণ রোদের তীব্রতার কাছে অনেকে হার মানলেও লড়ে গেছেন পটুয়াখালীর কৃষকরা। এপ্রিলজুড়ে তাপদাহে বিপর্যয়ে পড়েছে কৃষিখাত। চলমান সময়ে মাঠে রয়েছে রবিশস্য। তবুও তৃপ্তির হাসি নেই তাদের মুখে। কষ্টের সেই ফসল ঘরে তুলতে শহর পোড়া গরমকেও উপেক্ষা করে মাঠে অবিরত ছিল কৃষক পরিবার। কারণ এ মৌসুমে তাদের কাছে অধিক লাভের ফলন হিসেবে বেশ পরিচিত ‘মুগ ডাল’। চলতি বছরে মুগের ফলন ভালো হলেও টানা তাপদাহের কারণে ফসলের মাঠে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। সমাধান হিসেবে ছিল কেবলই বৃষ্টি। অবশ্য মে মাসে কোথাও কোথাও বৃষ্টির দেখা পেলেও তাও দীর্ঘস্থায়ী নয়। একইসাথে বৈশাখের শুরু হতে বৃষ্টি না থাকায় পাটের বীজ বপন ও আউশের বীজতলা তৈরিতে বিলম্বিত হচ্ছে।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরে এ জেলায় ৮৭ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে মুগ ডাল আবাদ হয়েছে। যার সম্ভাব্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন। এর বাজারদর হবে প্রায় আটশ’ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় উৎপাদন এবং বিক্রি কম। এ বছর বৃষ্টি হলে এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন মুগ উপাদন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
কৃষকরা বলছেন, এ বছর মুগডালের বাজারদর ভালো। কিন্তু অসহনীয় গরমের শ্রমিকরা ডাল কর্তন করতে পারেনি। যার কারণে অনেকেই কিছুটা লোকসানের মধ্যে পড়বে। অন্যান্য ফসল তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আশা করছি বৃষ্টি হলে যে ডাল রয়েছে সেগুলো চড়া দরে বিক্রি হবে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান বলেছেন, রবিশস্যের ফলন ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টি হলে মাটির ঊর্বরশক্তি ভালো হতো। এতে ফলন অধিক ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। একটানা তাপদাহ এবং প্রচণ্ড খরায় মাটির নিচ থেকে উপরে লবণ উঠে আসছে। এর ফলে কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব গাছ লবণসহিষ্ণু নয়। যেমন বিনামুগ-৮ ও বারিমুগ-৬। এ দুই জাতের মুগ গাছ কিছুটা লবণসহিষ্ণু। এ ছাড়া স্থানীয় সোনামুগ লবন সহিষ্ণু না হওয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ডালের বাজার দর ভালো। সঠিক সময়ে মুগ তুলতে পারলে কৃষক লাভবান হবেন।
পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, শহরজুড়ে তীব্র তাপদাহের প্রভাব পড়েছে কৃষিখাতে। রোদের তাপে মুগের জমিতে মাটি শুকিয়ে গেছে এবং কিছু অপরিপক্ব ডাল পেকে গেছে। এসব ডাল দ্রুত সময়ে কর্তন করা দরকার কিন্তু প্রচণ্ড তাপদাহে শ্রমিকরা সারাদিন ডাল কর্তনের কাজ করতে পারে না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুগডাল কর্তন করে নারী-শিশু শ্রমিকরা। তারা সকাল-বিকেল মিলিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা ডাল কর্তন করে থাকে, যা পর্যাপ্ত নয়। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে দ্রুত কর্তন করতে পারবে এবং কৃষকরা আরো লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement