১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
‘আমি সরকারি জমিতে দেয়াল তুললে গ্রামবাসীর তাতে কি? সরকার আমাকে না করুক। গ্রামবাসী বাধা দেয়ার কে?’

করিমগঞ্জে সরকারি জায়গায় প্রভাবশালীর দেয়াল নির্মাণ

সরকারি জায়গা দখল করে নির্মাণ করা প্রাচীর : নয়া দিগন্ত -


কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ পৌরসভার বেপারীপাড়া মোড় এলাকায় সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে প্রশস্ত এক দেয়াল (প্রাচীর) নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে দেলোয়ার হোসেন চুন্নু ওরফে চিশতী নামে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এই প্রাচীর নির্মাণের ফলে পশ্চিম নয়াকান্দি গ্রামের মানুষ পাকা সড়কে উঠতে পারছে না। সেই সাথে বন্ধ হয়ে গেছে সড়কের পাশে থাকা অন্তত ৪০টি পরিবারের চলাচলের পথ।
এর আগে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন চুন্নু গ্রামের পানি নিষ্কাশনের দু’টি কালভার্ট বন্ধ করে দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করায় তার বাড়ির উত্তর পাশের অন্তত এক শ’ পরিবার বর্ষায় পানিবন্দী অবস্থায় থাকছে। এখন বাড়ির সামনে এই দেয়াল নির্মাণ করায় বর্ষায় গ্রামের আরো এক শ’ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অভিযুক্ত প্রভাবশালী দেলোয়ার হোসেনের মূল বাড়ি গুজাদিয়া ইউনিয়নের বৈরাটিপাড়া গ্রামে। ২০১২ সালে তিনি পশ্চিম নয়াকান্দি গ্রামে এসে এখানে বিশাল এক বাড়ি করেন। ঢাকায় ইন্দিরা পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
পশ্চিম নয়াকান্দি গ্রামবাসীর অভিযোগ, প্রায় ৩০-৪০ বছরের চলাচলের রাস্তাটি আটকে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। এতে গ্রামের প্রায় এক- তৃতীয়াংশ পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের অন্য অংশের লোকেরা দীর্ঘ রাস্তা ঘুরে বাইরে বের হতে পারলেও দেয়ালের পিছনের পাড়ার লোকজন পড়েছেন মহাবিপদে। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় পৌরসভার মেয়র, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, যে জায়গায় দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে তার পেছনে ১০-১৫ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকটা পথ ঘুরে গিয়ে কথা হয় তাদের সাথে। আমিনুল ইসলাম নান্নু নামে তাদের একজন জানান, এলাকার বাচ্চু মিয়ার কাছ থেকে কয়েক দিন আগে দুই পয়েন্টের মতো জায়গা কেনেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু। এই কেনা জায়গার সূত্র ধরে তিনি সরকারি সড়কের জায়গাজুড়ে নিয়ে ইট দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। বাড়ি থেকে বের হওয়ার বিকল্প রাস্তা বা পথ না থাকায় তারা এখন মহাবিপদে। প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো কথা বলতে পারছে না।
গ্রামের কলেজছাত্রী সীমা আক্তার বলেন, যে জায়গায় দেয়াল তোলা হচ্ছে, সেই পথ ধরেই আমরা স্কুল ও কলেজে যাওয়া আসা করি। রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় এখন আমাদেরকে অনেকটা রাস্তা ঘুরে স্কুলের পথ ধরতে হচ্ছে। চুন্নু সাহেব প্রভাবশালী ব্যক্তি। জোর-জবরদস্তি করে তিনি রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ তিনি যেখানে দেয়াল তুলেছেন এটি সরকারি জায়গা।

অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন চুন্নু ওরফে চিশতী বলেন, আমি সরকারি জমিতে দেয়াল তুললে গ্রামবাসীর তাতে কি? সরকার আমাকে না করুক। গ্রামবাসী বাধা দেয়ার কে? আমি দেয়াল তোলার কারণে সরকারের বরং আরো উপকার হয়েছে। সড়কের পাশের মাটি সরবে না। দেয়ালে আটকে থাকবে।
করিমগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মুসলেহ উদ্দিন বলেন, পশ্চিম নয়াকান্দির লোকজন বিষয়টি আমাকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। জনগণের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে দেয়াল তোলা অন্যায়। পৌরসভার পক্ষ থেকে বিষয়টা যতটুকু দেখার আমরা দেখব।
এ বিষয়ে করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি, অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফারহানা আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারি জায়গা দখল করে কেউ স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে সেই জায়গা উদ্ধার করা হবে। এরপর জনগণ যেন নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে সে ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement