১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


বালিয়াডাঙ্গীতে কাটা হচ্ছে ৪ হাজার গাছ

এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি
কেটে ফেলার জন্য চিহ্নিত করা গাছ : নয়া দিগন্ত -

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ৩৭ কিলোমিটার রাস্তার চার হাজার গাছ কাটার কার্যক্রম শুরু করায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে যখন তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস করছে সারাদেশ। প্রকৃতিকে ঠাণ্ডা করতে দেশব্যাপী বিভিন্ন ধরনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। অথচ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় দেখা গেছে উল্টো চিত্র। চার হাজার গাছ কেটে ফেলছে বন বিভাগ।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, দরপত্র পাওয়া দিনাজপুরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা কিছু শ্রমিক রাস্তার গাছ কাটছেন। গত এক সপ্তাহে তিন শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে বলে জানান শ্রমিকরা।
গেল বছরেও এ উপজেলার বড়বাড়ী, আমজানখোর ও চাড়োল ইউনিয়নের প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তার পাঁচ হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়। পরে আট কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে নতুন গাছ লাগালেও অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গাগুলোতে গাছ লাগানোর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
জেলা বন বিভাগ বলছে, আট ইউনিয়নে রাস্তায় থাকা অবশিষ্ট গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য দরপত্র দিয়েছে বন বিভাগ। এর মধ্যে দু’টি ইউনিয়নে গাছ কাটা শুরু হয়ে গেছে।
দরপত্র অনুযায়ী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের লোহাগাড়া থেকে তিলকরা সরাকন্দি পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ও ধনতলা ইউনিয়নের পাঁচপীর থেকে ফুটানী হাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, তিলময় বাবুর বাড়ি থেকে এনামুল চেয়ারম্যানের বাড়ি হয়ে বাহার জিলা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ও সিন্দুরপিন্ডি থেকে খোঁচাবাড়ি হয়ে তীরনই নদীর শেষ সীমানা এবং দলুয়া হয়ে পান্তা ভিটা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারসহ মোট ৩৭ কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার পাশের বিশাল আকৃতির গাছগুলোর গায়ে সিরিয়াল নম্বর দেয়া হয়েছে।
মশালডাঙ্গী গ্রামের কৃষ্ণ রায় মাঠে কাজ করে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, রাস্তার ধারে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষেরা বসে একটু বিশ্রাম নেয়। এ তীব্র দাবদাহে রাস্তায় বিশালাকৃতির গাছ খুঁজেই পাওয়া যায় না। যে কটা আছে সেগুলোও কেটে ফেললে এলাকাটা মরুভূমির মতো হয়ে যাবে। তাই কয়েকটা মাস গাছ না কাটলে খুব উপকার হয়।
স্কুলছাত্র আবু শামিম বলেন, বাড়ি থেকে স্কুল সাত কিলোমিটার দূরে। রাস্তার দু’পাশের গাছগুলো কাটতে শুরু করেছে, স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হবে। প্রচণ্ড রোদে মানুষসহ পশুপাখির জন্য পরিবেশ আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
পাড়িয়া ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী বলেন, দরপত্র যখন হয়েছে ঠিকাদার গাছগুলো কাটবেই। এটা নিয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং বন বিভাগকে প্রয়োজনে লিখিত আকারে জানাব আমরা।
ঠাকুরগঁঁাঁও বন বিভাগের বন কর্মকর্তা শফিউল আলম মণ্ডল বলেন, গাছগুলো কাটার উপযোগী এবং যারা লাগিয়েছেন তাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় গাছগুলো কাটা বন্ধ রাখতে ঠিকাদার ও বন বিভাগকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। চার হাজার গাছ কেটে ফেলছে সেটা নিয়মকানুন মেনে কাটা হচ্ছে কি না সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেয়ার পরই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।


আরো সংবাদ



premium cement