উত্তরাঞ্চলে বোরো মৌসুমে সেচের পানির সঙ্কট
- শফিউল আযম বেড়া (পাবনা)
- ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
চলতি বোরো মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ সেচের পানির মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলের শতাধিক নদী, শাখা-প্রশাখা নদী ও সহস্রাধিক বিল শুকিয়ে যাওয়ায় ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাকৃতিক উৎস হারিয়ে যেতে বসেছে। উজান থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি প্রবাহ কমে গেছে। সে কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। শুধু সেচের পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রায় সাড়ে ১২ লাখ হেক্টর এক ফসলি জমি তিন ফসলিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
রাজশাহী ও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, সেচের পানির অভাবে রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক লাখ ৯০ হাজার হেক্টর হলেও সেচের আওতায় এসেছে ৫৬ হাজার হেক্টর, সিরাজগঞ্জে এক লাখ ৯১ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে এক লাখ হেক্টর। রাজশাহী জেলার এক লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৮৭ হাজার হেক্টর। নওগাঁ জেলায় আবাদযোগ্য দুই লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক লাখ ২২ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৩৫ হাজার হেক্টর। নাটোর জেলায় এক লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৬৮ হাজার হেক্টর। বগুড়ায় দুই লাখ ৩১ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে দুই লাখ হেক্টর।
রংপুর বিভাগের জয়পুরহাট জেলার ৮৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৭০ হাজার হেক্টর। গাইবান্ধায় এক লাখ ৫৯ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৯০ হাজার হেক্টর। রংপুর জেলার এক লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে এক লাখ হেক্টর। নীলফামারী জেলার এক লাখ ২২ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৫৫ হাজার হেক্টর। লালমনিরহাটের ৯৫ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৪৪ হাজার হেক্টর। কুড়িগ্রামের এক লাখ ৬৭ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৬৭ হাজার হেক্টর। দিনাজপুর জেলার দুই লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে এক লাখ ৬২ হাজার হেক্টর। ঠাকুরগাঁওয়ের এক লাখ ২৪ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৬১ হাজার হেক্টর। পঞ্চগড়ের ৯৮ হাজার হেক্টরের মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে মাত্র ১৯ হাজার হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র আরো জানায়, গত পাঁচ দশকের ব্যবধানে দেশে সেচযন্ত্র গভীর অগভীর নলকূপের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ লাখে। এ সময়ে সেচের জমি বেড়েছে প্রায় ২২ লাখ হেক্টর। এসব সেচযন্ত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের বড় বড় নদী, শাখা নদী, উপশাখা ও প্রশাখা নদীগুলোর সাথে যুক্ত অসংখ্য খাল, হাওর, বিল থেকে পানি সরবরাহ করে। ফলে যে কোনো নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা মানেই সরাসরি ওই নদীকেন্দ্রিক সেচব্যবস্থার ওপর আঘাত হানা। অভিন্ন নদ-নদীতে ভারতের বাঁধ প্রত্যক্ষভাবেই বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে অচল করে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে।