১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পোরশার পুনর্ভবা নদী এখন বালুচর

শুকিয়ে যাওয়া পুনর্ভবা নদীতে ক্রিকেট খেলছে স্থানীয় শিশুরা : নয়া দিগন্ত -

এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। পুনর্ভবা নদী নওগাঁর পোরশা উপজেলার সীমান্তবর্তী নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত। নদীতে এক সময় চলাচল করত অসংখ্য নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। ব্যবসায়ীদের ব্যবসার কাজে গানের সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর, ভোলাহাট, নাচোলসহ বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে। ওই উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা বড় বড় হাটবাজারে ব্যবসার জন্য মাঝিমাল্লারা ছোট বড় নৌকায় পাল তুলে ব্যবসায়ীদের ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কালাই, গমসহ নানা ধরনের পণ্য নিয়ে ছুটে চলতেন। শুধু ঔইসব পণ্যই নয়, হাটবাজারগুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। সে সময় নদীটি ছিল টইটুম্বুর। নদীকে সহজ পথ ভেবে কম খরচে যাতায়াতের জন্য অসংখ্য মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকার শক্ত ভিত গড়ে তুলেছিলেন। এই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক ব্যবসায়িক জনপদ। এ ছাড়াও নদীর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ধানসহ বিভিন্ন সবুজ ফসল ফলাতেন। এই পানিতে নানা ফসলে ভরে উঠত ফসলের মাঠ। কিন্তু ফসল থাকলেও সেই পানি এখন আর নেই। শ্যালো মেশিনের পানিতে চাষাবাদ করতে হচ্ছে কৃষকদের।

অপর দিকে জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন ও পাশের গ্রামগুলোতে অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও অফুরন্ত উৎস ছিল এই পুনর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর ধরে। জীবিকা নির্বাহের জন্য জেলেরা রাতদিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াত মাছ ধরার জন্য। সেই মাছ বিক্রি করে অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলত। পুনর্ভবার সাথে এখন জেলে পরিবারগুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। সে সময়ের ব্যবসা বাণিজ্যের উৎসগুলো হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা পুনর্ভবা এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। দুই পাশের পাহাড়গুলো হয়েছে কৃষি জমি। নদীতে জেগে ওঠা উঁচু চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, বলসহ বিভিন্ন খেলা। থমকে গেছে নদী আর নিভে গেছে বিপুল সম্ভাবনা জাগানো কর্মকাণ্ড। নদীকেন্দ্রিক সম্ভাবনাগুলো নিভে গেলেও কেউ কখনো এসব নিয়ে ভাবেনি। খরা মৌসুমে সরকারিভাবে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত বালুচরে পরিণত হতো না। খনন না করার ফলে নদীটি ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগে অনেকেই ধান চাষ করছেন। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement