১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভাটির তিস্তা ও যমুনায় ধু ধু বালুচর

যমুনার বুকে জেগে উঠেছে বিশাল চর। সঙ্কুচিত হচ্ছে নৌপথ। যমুনা সেতুর ভাটি থেকে তোলা ছবি : নয়া দিগন্ত -

তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় লালমনিরহাট জেলার ডালিয়া পয়েন্টের ভাটিতে মাইলের পর মাইল জেগে উঠেছে ধু ধু বালুচর। পানির অভাবে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা সেচ প্রকল্প প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এদিকে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের মিলিত প্রবাহের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী যমুনায় মারাত্মক নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা করতোয়া, ইছামতি, জলঢাকা, সতী, ঘাঘট, ফুলকুমার, ধুম, বুড়িঘোড়া, চিতনী, মরা করতোয়া, ধরলা, দুধকুমার, সানিয়াজান, তিস্তা, ঘাঘট, ছোট যমুনা, নীলকুমার, বাঙালী, জিঞ্জিরাম, বুড়িতিস্তা, যমুনেশ্বরী, মহানন্দা, চারালকাঁটা, পিছলাসহ ৫০টি নদী নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। অনেক নদী শুকিয়ে গেছে। যমুনা সংযুক্ত ২০টি নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে।
ভারত তিস্তা নদীর ওপর ব্যারাজ নির্মাণ করায় শুধু তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহই ব্যাপক হারে কমে যায়নি, যমুনা নদীতে তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কারণ যমুনার অর্ধেকের বেশি পানি তিস্তা থেকে আসে। ইতোমধ্যে যমুনা নদীর পানি প্রবাহ আশঙ্কাজনক ভাবে কমে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুর রব এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, তিস্তা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী। ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা এ নদী শুধু পানি নয় প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি নিয়ে আসে। তিস্তা উত্তরাঞ্চলের সেচকাজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, উদ্ভিদরাজি, পুরো ইকোলজিক্যাল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে। ভৌগোলিকভাবে তিস্তা অতি গুরুত্বপূর্ণ নদী। এই অঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরের জলাধারে সরবরাহের জন্য তিস্তার পানি একান্ত প্রয়োজন। তিস্তার পানি কমে গেলে এ এলাকার অন্যান্য ছোট ছোট নদীও শুকিয়ে যাবে। এ জন্য তিস্তার পানি সরবরাহ বাংলাদেশের বাস্তব ব্যবস্থার জন্য মৃত্তিকার উর্বরতার জন্য জীববৈচিত্র্য টিকে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
ইউনিসেফ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ সমীক্ষাভিত্তিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দুই কোটি ৬০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানিবঞ্চিত। এ সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। বাংলাদেশের বড় নদীগুলোর উজানে বাঁধ দিয়ে প্রতিবেশী দেশ পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় নদী অববাহিকায় সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেশের নদী অববাহিকায় খাওয়ার পানির তীব্র সঙ্কট চলছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা অফিসের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ২৫ বছর আগে যমুনা ও তিস্তা নদী দিয়ে যেসব কার্গো জাহাজ চলত এখন কার্গো জাহাজ চলতে পারে না। শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের ৯০ ভাগ নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময় বড় বড় জাহাজ তিস্তা হয়ে ভারতে যেতো। এখন তিস্তা পানিশূন্য হওয়াতে যমুনায় জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর।
নদী বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী কামরুন নেছা মনে করেন, তিস্তার উজানে ভারত ইতোমধ্যে অসংখ্য প্রকল্প নির্মাণ করে ফেলেছে। আরো প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব প্রকল্পের প্রতিক্রিয়ায় তিস্তার ভাটিতে পানির প্রবাহ আরো কমবে। বাংলাদেশ অংশে বাড়বে সঙ্কট। তিস্তায় পানি প্রবাহ কমার কারণে ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, বুড়ি তিস্তাসহ যমুনা নদীর পানি প্রবাহ কমে যাবে। বৃহত্তর রংপুর, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা প্রকল্প সচল রাখতে যেখানে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকতে হবে। সেখানে তিস্তায় পানি প্রবাহ কমে দাঁড়িয়েছে ৭০০ থেকে ১৫০০ কিউসেক।


আরো সংবাদ



premium cement